প্রকাশিত : সোমবার, ৮ মে ২০২৩

Share This News

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

ঈদের দ্বিতীয় দিনেও (শনিবার) দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় এবং তাদের পদভারে মুখরিত ছিল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এর প্রধান ফটকের বাইরে টিকিট কাউন্টারে এবং কোর সাফারি পার্কের সামনে টিকিটের জন্য পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।

পার্কের (প্রধান ফটক দিয়ে) ভেতরে ঢুকার টিকেট কাউন্টারে প্রচন্ড ভিড় থাকায় অনেক পর্যটক উপায়ন্তর না পেয়ে টিকেট কালোবাজারীর কাছ থেকে অতিরিক্ত মুল্যে টিেিকট ক্রয় করেন।

শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের প্রধান ফটকের সামনে কাউন্টার থেকে টিকেট ক্রয় করার জন্য হাজারো মানুষ কয়েক সারিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী নর-নারী এবং শিশুও রয়েছে।

নরসিংদী থেকে আসা আবু সাইদ জানান, ভিড় এড়াতে ঈদের দ্বিতীয় দিনে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে পার্কে আসি। কিন্তু টিকেট কাউন্টারে এতো ভিড় যে আধা ঘন্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাউন্টার পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ পাইনি। শেষে তিনশ’ টাকার বিনিময়ে এক কালোবাজীরর কাছ থেকে আমার টিকেট সংগ্রহ করে ভেতরে ঢুকি। পরে ভেতরে কোর সাফারি পার্কে বাঘ, সিংহ, ভালুক, জিরাফ, জেব্রা, বনগরুসহ বিভিন্ন প্রাণি উন্মুক্ত পরিবেশে দেখার জন্য কাউন্টারে টিকেট কাটতে গিয়ে দেখি একই রকমের ভিড়। সেখানেও পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন। শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে কোর সাফারি পার্কে ঢুকতে টিকেটের জন্য প্রায় তিন শ’ জনের পেছনে গিয়ে লাইনে দাঁড়াই। দুপুর তিনটার দিকেও টিকেট কাটতে পারিনি।

কুমিল্লার লাকসাম থেকে পার্কে আসা মো. আবু তালেব জানান, আমি আমার স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে শনিবার দুপুরে গাজীপুরের সাফারি পার্কে যাই। অনেক কষ্টে ভেতরে ঢুকার টিকেট ক্রয় করি। পরে উন্মুক্ত পরিবেশে বাঘ, সিংহ, হরিণ, জিরাফ, বিস্ট, ভালুক দেখার জন্য কোর সাফারি পার্কে যাই। কিন্তু সেখানে ওইসব প্রাণি দেখার টিকেট কেনার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও টিকেট কিনতে না পেয়ে পাশের সাফারি কিংডমে গিয়ে পাখিশালায় ম্যাকাউ,প্যারটসহ বিভিন্ন রকমের দেশি-বিদেশী পাখি দেখি। এছাড়ও হেঁটে হেঁটে ধনেশ এভিয়ারীতে ধনেশ পাখি, পেঁচা কর্ণারে পেঁচা, ময়ুর বেস্টনীতে ময়ুর, পাশে থাকা লেমুর, শকুন, জলহস্তী, উটপাখি, প্রজাপতি কর্ণারে প্রজাপতি, হাতি শো গ্যালারিতে হাতি, কুমির পার্কে কুমির, জলাশয়ে থাকা রং-বেরংয়ের মাছ, ঝুলন্ত ব্রীজ, শিশু পার্কের বিভিন্ন কিছু উপভোগ করতেই সময় শেষ হয়ে গেছে।

শেরপুর থেকে আসা মো. আবুল কালাম তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যান সাফরি পার্কে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে। এতে ভিড় কোর সাফারি পার্কের টিকেট জোগার করতে না পেরে। হাতিতে চড়ে আনন্দ করেছেন তার ছেলে মেয়েরা। প্রকৃতিক পরিবেশে পার্কের অন্যান্য অংশ ঘুরে এবং লেক ও ফুলের বাগানে বসেই আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়েছেন তা।

ঢাকার উত্তরা থেকে সাফারি পার্কে মোসা. কামরুন্নাহার যান তার এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে। তিনি জানান, অনেক কষ্টে টিকেট সংগ্রহ করে পার্কে থাকা বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, ম্যাকাউ, টিয়া, প্রজাপতি, জলহস্তী, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, মিঠা পানির কুমির, ময়ূর, শকুন জেব্রা, হাতি,উট পাখি, লেমুর, জিরাফ, বন গরুর বিচরণ উপভোগ করেছি।

ঈদের পরদিন শনিবার দুপুরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে আসেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্মুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন বণ্য প্রাণি ও পাখির বিচরণ উপভোগ করতে সাফারি পার্কে আসি। আজকে রোদ না থাকায় এবং আবহওয়া ঠান্ডা থাকায় খুব ভালোভাবে উপভোগ করেছি। তবে টিকেট সংগ্রহের বিড়ম্বার কথা স্বীকার করে বলেন এটা আরও সহজ করা দরকার।

ঈদের ছুটিতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে সাফারি পার্কে এসেছিলেন হাবিবুল ইসলাম ও সাহেবরা খাতুন দম্পতি। সাফারি পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দরে‌্য মুগ্ধ তাঁরা।

মোটরসাইকেল পার্কিংয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়:

পার্কের প্রধান ফটকের অদূরে রয়েছে মোটরসাইকেল পার্কিং জোন। সেখানে পাকিংয়ের জন্য ২৫টাকার টিকেট দেয়া হলেও ৫০টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন ভিক্টিমরা। পার্কের মোটর সাইকেল পার্কিং জোনে পার্কিং করতে গিয়ে ২৫টাকার টিকেট দেয়া হলেও ৫০টাকা নিচ্ছে সেখানকার আদায়কারীরা বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে যাওয়া আব্দুল হামিদ। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানালে তাকে হেনস্তার পরে মোটরসাইকেল নিয়ে অন্যত্র যেতে বলে ওই টাকা আদায়কারী। একই অভিযোগ করেছেন, গজীপুরের টঙ্গী থেকে পার্কে বাইক নিয়ে যাওয়া ইফতেখার আলম। পাখিশালায় অতিরিক্ত টাকা আদায়:

কাউন্টার থেকে চার পাঁচ ইভেন্ট দেখার জন্য ১০০টাকা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ম্যাকাউ এভয়ারীতে দায়িত্বরত বাচ্চু মিয়া ম্যাকাউ পাখিটি পর্যটকের হাতে বা কাঁধে তুলে দিয়ে ছবি উঠানোর সুযোগ দিয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে প্রতিজনের কাছ থেকে টিকেট ছাড়া অতিরিক্ত ৩০ টাকা টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে পাখি বা মানুষে রোগজীবানু ছাড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলেন সেখানে যাওয়া পর্যটক গাজীপুর মহানগরের নলজানি এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ।

দুর্গন্ধের হাতিতে চড়া:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পার্কে বেড়াতে আসা আমিনুল ইসলাম জানান, অনেক শখ করে ৩০টাকার বিনিময়ে পার্কের হাতিতে চড়ি। কিন্তু যতক্ষণ হাতির পিঠে ছিলাম, ততক্ষণ হাতির শরীর থেকে উৎকট দুর্গন্ধে যে আমার পেট ফুলে যাচ্ছিল। হাতিকে ভালভাবে গোসল করালে এ দূর্গন্ধ হতোনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাফারি পার্ক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন দর্শনার্থী কম হলেও পরের দিন পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় ভেড়ে গেছে। প্রথম দিন অন্তত ৮ হাজার এবং দ্বিতীয় দিন ১৬ হাজারের উপরে দর্শনার্থী পার্কে ঘুরতে আসছেন। তিনি টিকেট কালোবাজারীর, মোটর সাইকেল পার্কিংয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ এবং পাখি শালায় অনৈতিকভাবে টাকা নেয়াসহ হাতির শরীরে দূর্গন্ধের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়গুলো আমার নলেজে নেই। জেনে জড়িতদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেন তিনি। তিনি টিকেট কাউন্টারে ও সাফারি পার্কে বিড়ম্বার বিষয়ে বলেন, কোর সাফারি পার্কে পর্যটক পরিবহণের গাড়ি সংকট রয়েছে। বর্তমানে জীর্নশীর্ণ ৮টি গাড়ি দিয়ে পর্যটক পরিবহণ করা হচ্ছে। এখানে কমপক্ষে আরো ৫টি গাড়ি দরকার। এছাড়া পার্কে জনবল সংকটের কারণেও পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।