প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩

Share This News

অভূতপূর্ব হারে গলছে হিমবাহ, হুমকিতে দক্ষিণ এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ

অভূতপূর্ব হারে গলছে হিমবাহ, হুমকিতে দক্ষিণ এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এশিয়ার হিন্দুকুশ হিমালয়ের হিমবাহগুলি অভূতপূর্ব হারে গলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই হারে গলতে থাকলে এ শতাব্দীর মধ্যেই আয়তনের ৭৫ শতাংশ হারাবে এই হিমবাহ। হিমবাহ এতটাই দ্রুত গলছে যে বিজ্ঞানীরা এর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। এমনকি তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি হিসাবে এনেও কোনো কূলকিনারা করা যাচ্ছে না। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, এভাবে হিমবাহ গলতে থাকলে আগামী শতকেই হুমকিতে পড়তে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাস করা ২০০ কোটি মানুষের জীবন। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।

খবরে বলা হয়, হিমবাহ গলে যাওয়া বৃদ্ধির কারণে এখন থেকেই বিপজ্জনক বন্যা এবং পানির ভয়াবহ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। মঙ্গলবার কাঠমান্ডু-ভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট’ বা (আইসিআইএমওডি)- এর রিপোর্টে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সংস্থাটি আরও দ্রুত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের তাগিদ দিয়ে বলেছে, আগামী বছরগুলিতে আকস্মিক বন্যা এবং ভয়াবহ তুষারপাতের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে হিমালয় অঞ্চলে বসবাসকারী ২৪ কোটি মানুষ পানি সংকটে ভুগবে। এছাড়া, হিমালয় থেকে নেমে আসা ১২টি নদীর পাশে বসবাসকারী আরও এক কোটি ৬৫ লাখ মানুষের জীবনও এই পানি সংকটে প্রভাবিত হবে। আইসিআইএমওডি জানিয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে হিমালয়ের হিমবাহগুলো এখন ৬৫ শতাংশ বেশি দ্রুত গলছে।
এভাবে গলতে থাকলে চলতি শতকের মধ্যে হিমবাহগুলোর ৭৫ শতাংশ উধাও হয়ে যাবে।

আইসিআইএমওডির প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ফিলিপাস ওয়েসটার বলেন, তাপমাত্রা বাড়লে হিমবাহগুলো গলবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এগুলো গলছে অস্বাভাবিক হারে, দ্রুততার সঙ্গে। তিনি আরও বলেন, আমরা যেমনটা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশি গতিতে গলছে। চলতি বছরের গ্রীষ্মে, পুরো পৃথিবী জুড়েই তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে দাবদাহ। ইউরোপের আল্পস থেকে শুরু করে এশিয়ার হিমালয় পর্বতশ্রেণি– সবখানেই বরফ গলা অতীতের সব নজির ছাড়িয়ে গেছে।

উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বাইরে সবচেয়ে বেশি স্বাদু পানি জমা আছে হিমালয় পর্বতশ্রেণি ও এর শাখা পর্বতশ্রেণীতে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তাদের ধারণার চাইতেও উদ্বেগজনক মাত্রায় গলিয়ে ফেলছে হিমালয়ের হিমবাহগুলিকে। এতে হুমকিতে পড়েছে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা জলচক্র। হিমালয় এবং এর শাখা পর্বতশ্রেণি কারাকোরাম ও হিন্দুকুশে রয়েছে ৫৫ হাজার বেশি হিমবাহ। এরমধ্যে ৭ হাজারের বেশি রয়েছে পাকিস্তানে। সাম্প্রতিক দশকে হিমবাহগুলি গলে সেখানে ৩ হাজারের বেশি ছোট বড় হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে। মাঝেমধ্যেই পানির চাপে ভেঙে পড়ছে হ্রদের পাড়, বিপুল জলস্রোতে তলিয়ে যাচ্ছে জনপদ। বরফ যত গলছে, ততই বাড়ছে আকস্মিক ঢলের ঝুঁকি।

মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ এবং সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক আমিনা মাহারজান বলেন, এই পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বলতে গেলে কোনো ভূমিকাই রাখেনি। কিন্তু উষ্ণায়নের কারণে সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে আছে তারাই। বর্তমানে আমরা যেসব প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছি তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। বিশ্বজুড়ে বড় পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া এই ঝুঁকি মোকাবেলার আর কোনো উপায় নেই। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাউন্ট এভারেস্টের হিমবাহগুলি গত ৩০ বছরে যে পরিমাণ বরফ হারিয়েছে তা জমতে দুই হাজার বছর সময় লেগেছিল।