প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩

Share This News

মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত কেউ যেন মিশনে যেতে না পারেন, দেশগুলোকেই তা নিশ্চিত করতে হবে:

মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত কেউ যেন মিশনে যেতে না পারেন, দেশগুলোকেই তা নিশ্চিত করতে হবে:

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কাউকে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দেশকেই এটি নিশ্চিত করতে  হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ-পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স। জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে রোববার পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এমন কথা জানান। এর আগে গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন মায়ের ডাকের পক্ষ থেকে তার কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির জবাবে ই-মেইল বার্তা পাঠান জ্যাঁ-পিয়েরে। 

শান্তিরক্ষা মিশন প্রধান বাংলাদেশ সফরে থাকা অবস্থায় এই বার্তা দিয়েছেন। রোববার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। 

গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের উদ্দেশ্যে দেয়া বার্তায় জ্যাঁ পিয়েরে আরও বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাসদস্য বা পুলিশ পাঠানো সব দেশকে জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী পরিষ্কার করতে হবে যে, মোতায়েন করা বা রোটেশনের ভিত্তিতে যাদেরকে মিশনে পাঠানো হচ্ছে তারা কেউই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বা আন্তর্জাতিক কোনো মানবিক আইন লঙ্ঘন করেননি অথবা তাদের কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও নেই। এর আগে মায়ের ডাকের পক্ষ থেকে তার কাছে যে চিঠি পাঠানো হয়, তাতে জ্যাঁ পিয়েরের প্রতি অনুরোধ করা হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে মোতায়েন করা সদস্যদের মানবাধিকারের সর্বজনীন নীতি এবং জবাবদিহিতা যেন নিশ্চিত করা হয়। 

একই সঙ্গে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়ার আহ্বানও জানানো হয়। জবাবে জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের সংযুক্তিকে সফল করতে সবার আগে আমরা যে জিনিসটি করি, তাহলো শান্তিরক্ষী মিশনের সবাইকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুণগত মান, সততা,  যোগ্যতা এবং কর্মদক্ষতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড বজায় রাখতে হয়। এটা বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম অনুযায়ী শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোকে জাতিসংঘের এসব নিয়ম মেনে চলতে হয়। তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে যে, যাদেরকে মিশনে পাঠানো হচ্ছে তারা কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত নন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছেন বা লঙ্ঘনের অভিযোগও নেই তাদের বিরুদ্ধে। 

শান্তিরক্ষা মিশনে অসমতা দূর করার আহ্বান: ওদিকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে লাক্রোইক্স শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নমূলক ঘটনা প্রতিরোধ ও অসমতা দূর করতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার ঢাকায় জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।

আগামী ডিসেম্বরে ঘানায় অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে ঢাকায় প্রথম প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হলো। রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দিনের প্রস্তুতি সভার সমাপনী বক্তব্য দেন পিয়েরে। 

জ্যাঁ পিয়ের বলেন, জাতীয় পর্যায়ে ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সমতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো শনাক্ত করতে সবাইকে এক হতে হবে। এ লক্ষ্যে সামরিক ক্ষেত্র ও বিশ্বজুড়ে নারীর সাম্প্রতিক যে পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে হবে। এই পরিবর্তন আনতে হবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমেও।

জ্যাঁ পিয়ের বলেন, নারীর ক্ষেত্রে জাতিসংঘ পাঁচটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে তা মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছে। পাঁচটি বিষয় হচ্ছে প্রথমত, নারী যেসব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে সেগুলোর তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা। কিছু দেশ প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে ভালো উদাহরণ তৈরি করেছে, সেগুলো যেন অন্য সদস্য দেশগুলো অনুসরণ করে এবং সমস্যা সমাধানে উন্নয়নশীল দেশগুলো আর্থিক সহায়তাও চাইতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে নারীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।

তৃতীয়ত, জাতীয় পর্যায়ে এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীর জন্য জেন্ডারবান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে। চতুর্থত, নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, সহিংসতা ও বৈষম্য দূর করতে জাতিসংঘ যেভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেয়, সেটা যেন অন্য দেশও অনুসরণ করে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর নারীরা যেন নেতৃত্বের অবস্থানে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলাদেশে সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের ঘটনা নেই বললেই চলে। এ ধরনের ঘটনা কখনও ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যেসব নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, তা কমানোর লক্ষ্যে ডিসেম্বরে ঘানায় অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. কামরুল আহসান বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ নারী পুলিশ অনুসরণীয় ভূমিকা পালন করছেন। নারীদের কাজের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত হয়েছে, তা দূর করে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীর অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা কৌশল, নীতি ও কমপ্লায়েন্স বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথরিন পোলার্ড, কানাডার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মহাপরিচালক (শান্তি ও স্থিতিশীলতা কর্মসূচি) উলরিক শ্যানন, উরুগুয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (রাজনৈতিক) লুইস বেরমুদেজ এবং জাতিসংঘের পুলিশ উপদেষ্টা ফয়সাল শাহকার বক্তব্য রাখেন।