প্রকাশিত : রবিবার, ২৭ আগস্ট ২০২৩

Share This News

পক্ষাঘাতগ্রস্তরা কথা বলবেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায়

পক্ষাঘাতগ্রস্তরা কথা বলবেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায়

প্যারালাইজড কিংবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে অনেকেই কথা বলার ক্ষমতা হারান। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার আর কোনো উপায় থাকে না। যদিও পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ডিভাইস নিয়ে বহুদিন ধরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু রয়েছে। সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের একটি সমাধান দেখিয়েছে। মানুষের মস্তিষ্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিপ ইমপ্ল্যান্ট করার মাধ্যমে খুব সহজেই তাদের কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া যাবে। 

সম্প্রতি পক্ষাঘাতগ্রস্ত দুই নারীর ওপর এমন একটি চিপ দিয়ে পরীক্ষা সফল হয়েছে৷ একজন এমিওট্রোফিক লেটারাল স্কেলেরোসিস বা এএলএসে আক্রান্ত ছিলেন। অন্যজনের মস্তিষ্কের শেকড়ে আঘাত ছিল। তাদের উচ্চারণে সমস্যা থাকলেও তারা শব্দ কিভাবে উচ্চারণ করতে হয় তা ভালোভাবেই মনে রেখেছিলেন। মুখভঙ্গির সঙ্গে নিউরনের কার্যক্রিয়ার সমন্বয় যাচাই করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত চিপটি মিনিটে ৬০-৭৮টি শব্দ শনাক্ত করতে পারে। অতীতের যেকোনো যন্ত্রের তুলনায় এবার সফলতার হার দ্রুত ও আরও নিখুঁত। সম্প্রতি ন্যাচার জার্নালে দুটো আলাদা পেপারে এই দুটো পরীক্ষার সংবাদ পাওয়া গেছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরাল প্রস্থেটিক ট্রান্সন্যাশনাল ল্যাবরেটরির অধ্যাপক ফ্র‍্যাংক উইলেট জানান, 'ভবিষ্যতে এখন কেউ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলেও নিজের মনের ভাব সহজেই প্রকাশ করতে পারবে। তাদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা আর কাজ করবে না।'

সচরাচর একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক ব্যক্তি ইংরেজিতে প্রতি মিনিটে ১৬০টি শব্দ উচ্চারণ করে থাকেন। সে হিসেবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনও কিছুটা ঘাটতিতে রয়েছে। তারপরও চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য এটি একটি বড় অগ্রগতি। নতুন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত যন্ত্রটিকে নাম দেওয়া হয়েছে ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস বা বিসিআই। বিসিআই মস্তিষ্ক থেকে নিউরন সিগন্যাল সংগ্রহ করে এক্সটার্নাল একটি ডিভাইসে কমান্ড প্রেরণ করে। এই সিস্টেমের ব্যবহারে রোবটিক হাত বা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করার সুযোগ বাড়বে। 

স্ট্যানফোর্ডের এই গবেষণায় যে যন্ত্রটি বানানো হয়েছে তা ছোট একটি চিপ। অনেকটা ছোট চিরুনির মতো একটি চিপ। এই চিপে ৬৪টি ক্ষুদ্র সূচ রয়েছে। এই সূক্ষ্ম সূচগুলোই মূলত মস্তিষ্কের নিউরনের তথ্য সংগ্রহ করে এনালাইজ করে থাকে এবং এক্সটার্নাল যন্ত্রাংশে তা প্রক্রিয়াকরণ করবে। কৃত্রিম নিউরনাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ার ব্যবহার যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণের। মস্তিষ্ক থেকে সংগৃহীত তথ্য একটি স্ক্রিনে দেখাবে। ৬৮ বছর বয়স্ক প্যাট ব্যানেটের ওপর প্রথম এই চিপ পরীক্ষা করা হয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে এই পরীক্ষা শুরু হয়। বিগত কয়েক মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে থাকে। সফটওয়্যারটি নিজেই মস্তিষ্কের নিউরনাল সিগনাল শনাক্ত করে তা ডিকোড করার সক্ষমতা অর্জন করে নেয়। আস্তে আস্তে এটি অনুমানসাপেক্ষে মোটামুটি নিখুঁত উত্তর দিতে সক্ষম হয়। মোটামুটি নিখুঁত বলা হচ্ছে কারণ এখনও সফটওয়ারটি ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ সময়ে ভুল করে। তাও এটি একটি অগ্রসরতা।