প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩

Share This News

ভারতে স্মার্টফোন কারখানা নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ ফক্সকনের

ভারতে স্মার্টফোন কারখানা নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ ফক্সকনের

ভারতে স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা গড়ে তুলতে ভূমি অধিগ্রহণ করেছে ফক্সকন। বিশ্বের বৃহত্তম ইলেকট্রনিকস নির্মাতা সংস্থাটি সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে। তাইওয়ানভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি বলছে, ফক্সকনের অঙ্গ সংস্থা ‘ফক্সকন হং হাই টেকনোলজি ইন্ডিয়া মেগা ডেভেলপমেন্ট’ কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে ৩০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছে। এ ভূমি কিনতে ফক্সকনের ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ৩০০ কোটি ভারতীয় রুপি। চীনের বাইরে উৎপাদন কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে আইফোনের বৃহত্তম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি। 

মানি কন্ট্রোলের তথ্যানুযায়ী, কর্ণাটকের কারখানা ছাড়াও হায়দরাবাদের উপকণ্ঠেও ১৮৬ দশমিক ৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে ফক্সকন এবং এর অঙ্গ সংস্থাটি তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের দক্ষিণ রাজ্যে আইফোন এবং অন্যান্য স্মার্টফোন তৈরি করছে। প্রযুক্তি জায়ান্টটি কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, গুজরাটসহ দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতীয় রাজ্যগুলোতেও স্মার্টফোন এবং চিপ উৎপাদন কার্যক্রম প্রসারিত করতে চায়। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কঠোর কভিড নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। এতে অ্যাপলের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উভয় কোম্পানিই চীনের বাইরে অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হওয়ার পরিকল্পনা করে। ইকোনমিক টাইমস সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, বেঙ্গালুরুর বিমানবন্দরের কাছে ফক্সকনের স্মার্টফোন কারখানার নির্মাণকাজ ২২ মে থেকে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিল্পোদ্যোগ, ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তিবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজিব চন্দ্রশেখর এক টুইট বার্তায় জানান, কর্ণাটকের ৩০০ একর বিস্তৃত নতুন কারখানায় অ্যাপল ফোন উৎপাদন করা হবে। 

বিজনেস ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক স্টিভেন সেং এক গবেষণামূলক নোটে জানিয়েছেন, উৎপাদন বৈচিত্র্যের প্রচেষ্টার কারণে চীনে অ্যাপলের কার্যক্রম কমবে। ২০২০ সালে চীনা কারখানায় অ্যাপল সরবরাহকারীদের হিস্যা ৪২ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৩০ শতাংশে নেমে আসবে। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ এবং ভারত লাভবান হবে।

ফক্সকন চেয়ারম্যান ইয়াং লিউ চলতি সালের শুরুর দিকে ভারতে সফর করার পর গত মার্চ মাসে ফক্সকনের পরিকল্পিত স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানাসহ ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন করে। কর্ণাটক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাসাভারাজ এস বোম্মাই গত মার্চে বলেছিলেন, ‘অ্যাপল শিগগিরই রাজ্যের একটি নতুন কারখানা চালু করবে। যেখানে আইফোন তৈরি করা হবে। ফলে কারখানাটিতে প্রায় এক লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’ 

ব্লুমবার্গ নিউজ তখন জানিয়েছিল, ফক্সকন কর্ণাটকে একটি নতুন কারখানায় ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। ব্লুমবার্গের সে প্রতিবেদনের সত্যতাও পাওয়া যায়। কেননা ফক্সকন চেয়ারম্যান ইয়ং লিউ তখন চিপ উন্নয়ন এবং বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইভি) উৎপাদনের মতো নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে রাজ্য পরিদর্শন করেছিলেন।

ইয়ং লিউ ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন পরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ তিনি জানান, ফক্সকন ২০১৯ সাল থেকে ভারতে তামিলনাড়ুর কারখানায় অ্যাপল হ্যান্ডসেট তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া তাইওয়ানের আরো দুটি সরবরাহকারী উইস্ট্রন এবং পেগাট্রন, ভারতে অ্যাপল ডিভাইস উৎপাদন এবং সংযোজন করে।

প্রতিবেদন বলছে, অ্যাপল ভারতের বাজার বিস্তৃতি করার ব্যাপারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। অ্যাপলের সিইও টিম কুক গত মাসে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে প্রথম দুটি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র চালু করেছে। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কোম্পানিটি ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশটির ওপর বড় ধরনের বাজি ধরছে। যেখানে চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী রয়েছে।

বাজারের মূল্যের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিটি ভারতে নিজস্ব উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে। গত সেপ্টেম্বরে অ্যাপলের ফ্ল্যাগশিপ মডেল চালু হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর নির্মাতাটি ঘোষণা দিয়েছিল তাদের সর্বশেষ আইফোন ১৪ উৎপাদন হবে ভারতে। ব্লুমবার্গের মতে, গত বছর অ্যাপলের মোট আইফোন উৎপাদনের ৭ শতাংশ হয়েছিল দেশটিতে। অ্যাপলের উৎপাদন সম্প্রসারণ কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কৌশলকে আরো শক্তিশালী করেছে।