প্রকাশিত : শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Share This News

ডিম, আলু ও পেঁয়াজ মিলছে না নির্ধারিত দামে

ডিম, আলু ও পেঁয়াজ মিলছে না নির্ধারিত দামে

জরুরি নিত্যপণ্য আমদানি ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে হাতেগোনা কয়েকটি গোষ্ঠী। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ পণ্যের নিয়ন্ত্রণও খাতভিত্তিক সমিতির হাতে। বাজারে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কায় এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে জাতীয় সংসদেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সিন্ডিকেট যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের দেখে নেওয়া হবে। এর মধ্যে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় গত বৃহস্পতিবার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হলে এবার ভোক্তা অধিদপ্তর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোনো দোকানেই নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮৫ থেকে ৯০, আলুর কেজি ৫০ টাকা। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে বাগবিতণ্ডা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হলে নির্ধারিত দাম বাস্তবায়ন করা কঠিন।

গত বছর ৩০ আগস্ট চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, সিমেন্ট, রডসহ মোট ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এসব পণ্যের যৌক্তিক দাম পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ঠিক করার সিদ্ধান্ত থাকলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। মূলত কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে ট্যারিফ কমিশন তেল ও চিনি ছাড়া বাকি পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারেনি।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, যারা মালপত্র সরবরাহ করে, তারা না কমালে খুচরা ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারবেন না।

তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, গোড়া ঠিক না করে, মাথায় বানলে হবে না। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন ছিল। এখন আমরা বেশি দামে কিনব না, বিক্রিও করব না, জরিমানাও খাব না। কম দামে পেলে কম দামে বিক্রি করব।

গতকাল পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ১০০ পিস বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৩৫ থেকে ১ হাজার ১৪০ টাকা। পিস হিসাবে ১১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৪০ পয়সা। সাদা ডিমের শ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকা। সাদা ডিমের পিস বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। ডিমের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে দোকানে আনা পর্যন্ত পরিবহন ও ভাঙা ডিমের হিসাব করে খুচরা মূল্য ঠিক করতে হয়। প্রতি পিস ডিমে ৩০ থেকে ৫০ পয়সা পর্যন্ত খরচ পড়ে। বর্তমান বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করা সম্ভব নয়। উৎপাদন ও পাইকারি বাজারে দাম কমলে খুচরায় ১২ টাকা বা তারও কমে বিক্রি করা সম্ভব।

পোলট্রি খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেন, ডিমের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এ দামে বিক্রি করতে হলে খামারিদের উৎপাদন খরচ, পাইকারি, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কে কত লাভে বিক্রি করবেন, তা নির্ধারণ করা উচিত ছিল। বলা হচ্ছে, নির্ধারিত দাম বাস্তবায়ন না হলে আমদানি করা হবে। ডিম আমদানি হলে পোলট্রি খাতে অস্থিরতা বাড়বে।

অন্যদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় সরকার আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু তার যথাযথ সুফল ভোক্তারা পাচ্ছে না। আমদানির পরও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আমদানি পেঁয়াজের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং আমদানি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ফলে দেখা যাচ্ছে, আমদানি করেও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

একইভাবে দেশে আলুর পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও হিমাগার থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকার বেশি দামে, যা আড়ত হয়ে খুচরা পর্যায়ে এসে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে। সরকারি ও খাত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি বছর কৃষকরা ১২ থেকে ১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন। এর সঙ্গে সংরক্ষণ ব্যয় কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা যোগ হয়ে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ বছর মে মাসে হিমাগার থেকে প্রতি কেজি আলু ২৬ থেকে ২৭ টাকায় বিক্রি হয়, যা পরবর্তী সময়ে বাড়তে থাকে। বর্তমানে হিমাগার পর্যায়ে ৩৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুত রয়েছে, তা দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ বজায় থাকবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করবে।