প্রকাশিত : সোমবার, ২ অক্টোবর ২০২৩

Share This News

ইউক্রেন যুদ্ধে জন্ম নিচ্ছে নতুন বিশ্বব্যবস্থা, তাতে জয়ী হবে কে?

ইউক্রেন যুদ্ধে জন্ম নিচ্ছে নতুন বিশ্বব্যবস্থা, তাতে জয়ী হবে কে?

নাটালি টচি

৩০টির বেশি দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘে আনা প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত থেকেছে । পুতিনের রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতেও অস্বীকৃতি জানানো দেশের সংখ্যাও অনেক। এ দুটি ঘটনা ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর জন্য অপ্রীতিকর বিস্ময়। বিশ্বে মাত্র ৪০টি দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর অর্থ হলো, বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।

ইউক্রেন যুদ্ধে জন্ম নিচ্ছে নতুন বিশ্বব্যবস্থা, তাতে জয়ী হবে কে?

সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে জি-২০ সম্মেলন ঘিরে ইউক্রেনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে ভূরাজনৈতিক বিভক্তি আবার খোলাখুলিভাবে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু শেষমেশ একটা মুখ রক্ষার বিবৃতির ব্যাপারে ঐকমত্য আসে। সেই বিবৃতিতে রাশিয়ার আগ্রাসন উল্লেখ না করে ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করা হয়।

এর মানে এই নয় যে জি-২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে বসা দেশগুলোর সবাই রাশিয়ার আগ্রাসনকে পৃষ্ঠপোষকতা করে, তেমনটা নয়। ইউক্রেনের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি তাদের সমর্থন নেই, তা-ও নয়। জি-২০ সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে খুব স্পষ্ট করে কোনো দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বলপ্রয়োগকে খারিজ করা হয়েছে।

বৈশ্বিক দক্ষিণ ইউক্রেন যুদ্ধকে ইউরোপীয় যুদ্ধ বলে বিবেচনা করে। এ যুদ্ধে তাদের কোনো অংশীদারত্ব নেই বলে মনে করে। যদিও এ যুদ্ধের অবধারিত ধাক্কা হিসেবে খাদ্য ও জ্বালানির নিরাপত্তাহীনতার ভুগছে দেশগুলো। এর অর্থ হলো, অন্যায্য পথে হলেও যুদ্ধ যাতে দ্রুত শেষ হয়, সেটাই চায় তারা। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তারা মূল্য চুকাতে রাজি নয়।

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় গ্লোবাল টাউন হল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। গ্লোবাল নর্থের (বৈশ্বিক উত্তর) প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে একজন আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলাম আমি। গ্লোবাল নর্থ (বৈশ্বিক উত্তর) এবং গ্লোবাল সাউথের (বৈশ্বিক দক্ষিণ) মধ্যে ভেঙে পড়া সেতু কীভাবে পুনর্নির্মাণ করা যায়, এ বিষয়ে বিতর্ক হয়। সেই বিতর্কে আমার চোখ খুলে গেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিমা বিশ্বকে বাধ্য করেছে বৈশ্বিক দক্ষিণের প্রতি তাদের যে উপেক্ষার দৃষ্টি, সেটা পাল্টাতে। ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও বিরক্তিকে সামনে নিয়ে এসেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা ঔপনিবেশিক কিংবা নয়া ঔপনিবেশিক আচরণ কিংবা মানবাধিকার ইস্যুতে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী আচরণের কারণেও হতে পারে।

সংলাপে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইউরোপ ও আমেরিকার উদ্দেশে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধির কণ্ঠেও ছিল সমালোচনার সুর। আমাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘বৈশ্বিক দক্ষিণে এখন কী কারণে পশ্চিম বৃহত্তর স্বার্থ খুঁজে পাবে?’ এই প্রশ্নের আকস্মিকতা আমাকে ভাবতে বাধ্য করে। তাঁদের করা প্রশ্নটি সঠিক।

গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণ ধারণাটি হঠাৎ করেই পশ্চিমের যেকোনো জমায়েতেই খুব বেশি শোনা যাচ্ছে। দক্ষিণেও এই ধারণার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল এবং সাবেক উপনিবেশিত দেশগুলোতে এই ধারণার প্রচলন বাড়ছেই।