প্রকাশিত : শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩

Share This News

জয়ের ধারায় ফিরতে মরিয়া ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা

জয়ের ধারায় ফিরতে মরিয়া ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে অঘটনের শিকার হয়েছে। ঠিক তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকার জয়রথ থামিয়ে দেয় পুঁচকে নেদারল্যান্ডস। আফগানিস্তানের কাছে ইংল্যান্ড হেরে ভীষণ লজ্জা পেয়েছে।

তেমনি নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের লজ্জা পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। তাইতো অঘটনের দুঃস্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে আজ বিশ^কাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দল দুটি। অঘটনের দুঃস্মৃতি ভুলে জয়ের ধারায় ফেরার লক্ষ্য দুটি দলেরই।

অথচ চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বেশ কিছু বিশ্বরেকর্ডের মালিক হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪২৮ রানের পাহাড় সমান স্কোর করে দাপুটে জয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে তারা। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৪ রানের বড় জয়ের দেখা পায় প্রোটিয়ারা। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে তাদের জয়রথ থামিয়ে দেয় নেদারল্যান্ডস। আজ শনিবার ভারতের মুম্বাইয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এই ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস।

নিউজিল্যান্ডের কাছে ৯ উইকেটে হার দিয়ে এবারের বিশ^কাপ মিশন শুরু করেছিল বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম জয়ের দেখা পায় ইংলিশরা। কিন্তু নিজেদের পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৬৯ রানে পরাজিত হয়ে বড় ধাক্কা খায় জশ বাটলারের দল। গত রোববার ভারতের নয়াদিল্লিতে প্রথমে ব্যাট করে সব উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান। ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ৮০ ও ইকরাম আলিখিল ৫৮ রান করেন। প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ পূঁজি নিয়ে ইংল্যান্ডকে চেপে ধরে আফগানিস্তানের বোলাররা। ম্যাচে আফগানিস্তানের তিন স্পিনার মুজিব উর রহমান, রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবী মিলে ৮ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ২১৫ রানে অলআউট করে দেয়। মুজিব ও রশিদ ৩টি করে এবং নবি ২টি উইকেট নেন।

অঘটনের খাতায় ইংল্যান্ডের নাম উঠার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় অঘটনের শিকার হয় দক্ষিণ আফ্রিকাও। গত মঙ্গলবার ধর্মশালাতে বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা দল নেদারল্যান্ডসের কাছে ৩৮ রানে হেরেছিল প্রোটিয়ারা। অথচ বিশ^কাপের শুরুটা দারুণ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। শ্রীলংকার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪২৮ রান করে ১০২ রানের জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৩৪ রানে বিশাল ব্যবধানে হারায় প্রোটিয়ারা।

একশ’র বেশি ব্যবধানে প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের পর নেদারল্যান্ডসের কাছে হারে হতাশ দক্ষিণ আফ্রিকা। হারের হতাশাকে ভুলে গিয়ে জয়ের ধারায় ফিরতে চায় প্রোটিয়ারা। দলের অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা বলেন, ‘প্রথম দুই ম্যাচে যেভাবে শুরু করেছি, সেটি ধরে রাখতে পারিনি আমরা। নেদারল্যান্ডসের কাছে হার অবশ্যই হতাশার। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলিনি। কিন্তু ওইদিনের ম্যাচ নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং জয় পেতে হবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে হলে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে। ইংলিশরা শুরু থেকেই আমাদের আক্রমণ করবে, আমাদের পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে হবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ধারায় ফিরতেই মাঠে নামবে ছেলেরা।’ দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক বাভুমার মতো জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না ইংল্যান্ডও। আসরে দ্বিতীয় জয় পেতে নিজেদের সেরাটা উজার করে মরিয়া ইংলিশরা, এমনটাই জানালেন ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক জশ বাটলার। তিনি বলেন, ‘আগের ম্যাচের হার আমাদের জন্য ভীষণ পীড়াদায়ক। কিন্তু ওই দিনের হার আমাদের সতর্ক করেছে। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে আছি। ইতোমধ্যে দুই ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালের রেসে বেশ খনিকটা পিছিয়ে পড়েছি আমরা। তাইতো শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না দল।’

ইনজুরির কারণে এখনো ইংল্যান্ডের জার্সিতে মাঠে নামতে পারেননি ডানহাতি অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন স্টোকস। তিনি বলেন, ‘আমি এখন ভালো অবস্থায় আছি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে তর সইছে না। আশা করছি, ইংল্যান্ডের চতুর্থ ম্যাচে মাঠে নামতে পারব।’

এ ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে ইংল্যান্ড ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন পেসার জোফরা আর্চার। তার খেলার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু রিস টপলির হাঁটুর ইনজুরিতে আর্চারকে দলের সঙ্গে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইংল্যান্ডের টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশ^কাপে এর আগে সাতবার মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এরমধ্যে ইংল্যান্ডের জয় ৪টিতে, দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৩টিতে। গতবারের বিশ^কাপে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১০৪ রানে জয় পেয়েছিল ইংলিশরা।

বিশ^কাপ পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে জয়ের পাল্লা ভারী দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেই। ইংলিশদের বিপক্ষে ৬৯ বারের মোকাবিলায় ৩৩টিতে জয় আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ৩০টিতে জিতেছে ইংল্যান্ড। ১টি ম্যাচ টাই ও ৫টি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। তা ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে সর্বশেষ দেখায় ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর সেটাই ইংলিশদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ভালো করতে আশা জোগাচ্ছে প্রোটিয়াদের।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলে আছেন কুইন্টন ডি কক-রাসি ভ্যান ডার ডুসেন, ডেভিড মিলার ও আইডেন মার্করামদের মতো বিশ্বসেরা সব ব্যাটসম্যান। এখনো ফাইনালে খেলতে না পারলেও প্রোটিয়াদের দলে সেরা ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি আছেন লুঙ্গি এনগিডি, আন্দিলে ফেলুকুওয়াও, কাগিসো রাবাদাদের মতো পেসাররা। যারা কিনা একটি ম্যাচকে একাই ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে ইংল্যান্ড দলে আছেন জশ বাটলার, জো রুট, জনি বেয়ারস্টো, হ্যারি ব্রæক ও ডেভিড মালানদের মতো বিশ্বসেরা সব ব্যাটসম্যান। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিনদের দলে সেরা ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি আছে বেন স্টোকস, স্যাম কারেন, ক্রিক ওকস, ডেভিড উইলি ও মার্ক উডদের মতো পেসাররা। তাইতো আজ দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে ইংল্যান্ডের পেসারদের দারুণ এক উপভোগ্য লড়াই দেখায় অপেক্ষায় আছে ক্রিকেট বিশ্ব।