প্রকাশিত : শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩

Share This News

আজ বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আজ বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আজ উন্মোচন হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে 'বঙ্গবন্ধু টানেল'-এর উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি আনোয়ারা কেইপিজেড মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন। পাশাপাশি আরও ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজে উঠেছে চট্টগ্রাম। আনোয়ারা কেইপিজেড মাঠে তৈরি করা হয়েছে বিশালাকৃতির মঞ্চ। দেশের প্রথম টানেল উদ্বোধন স্মরণীয় করে রাখতে উদ্বোধনের বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা সরাসরি প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্র।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামীকাল থেকে নদীর তলদেশ দিয়ে রোমাঞ্চকর যাত্রার স্বাদ নিতে পারবেন জনসাধারণ। তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারায়, আবার আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গায় যাতায়াত করা যাবে। ধীরে ধীরে চীনের সাংহাই শহরের আদলে 'ওয়ান সিটি টু টাউন' হিসেবে গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এটি দিয়ে থ্রি হুইলার ও মোটর সাইকেল চলাচল করতে পারবে না। ইতোমধ্যে টোলহারও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী প্রথম উত্তর সুড়ঙ্গের খনন কাজের উদ্বোধন করেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর দুটি সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ

সাংবাদিকদের বলেন, 'বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।'

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এ ছাড়া ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটারের অ্যাপ্রোচ সড়কের পাশাপাশি ৭২৭ মিটারের একটি ওভারপাসও রয়েছে। টানেল চালু হলে ঢাকাসহ পুরোদেশ থেকে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী বিভিন্ন গাড়ি শহরে না ঢুকে ফৌজদারহাট থেকে আউটার রিং রোড ধরে টানেল হয়ে যাতায়াত করবে। এতে চট্টগ্রাম শহরের ওপর যানবাহনের চাপ কমবে।

সমীক্ষা অনুযায়ী টানেলের ভিতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। প্রতিদিন চলাচল করতে পারবে সাড়ে ১৭ হাজার গাড়ি। ২০২৫ সালে বেড়ে দৈনিক গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি ও ২০৩০ সালে প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালে ১ লাখ ৬২ হাজার গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার ৫০ শতাংশ হবে পণ্যবাহী গাড়ি।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, 'উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে পরের দিন থেকে টোলের বিনিময়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।'

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে ব্যানার-ফেস্টুন-তোরণে ছেয়ে গেছে আনোয়ারা-কর্ণফুলীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোকে সাজানো হয়েছে বিশেষভাবে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি মেগা প্রজেক্টসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুনে। জনসভায় দশ লাখ জনসমাগমের টার্গেট রয়েছে।

কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে কর্ণফুলীর প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বয়ে চলছে। পুরুষের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে মহিলারাও জনসভায় যোগ দেবেন।'

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর জনসভা হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা। চট্টগ্রামের সব উপজেলা থেকে লোকজন জনসভায় যোগ দেবেন। দশ লাখেরও বেশি মানুষের সমাবেশ হবে। আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঈদ আনন্দ চলছে।'

এ প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এই টানেল। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার "গ্রাম হবে শহর" প্রকল্পও বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আমার বাবা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর "ওয়ান সিটি টু টাউন"র স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে পরিণত হবে জনসভা। দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সব সময় বিশ্বাসী।'

বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার নূর আনোয়ার রনজুর পরিকল্পনায় ও কন্ট্রোলার/ প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোমানা শারমীনের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের শিল্পীদের নিয়ে ২টি নান্দনিক থিম সঙ্গীত নির্মিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে ২টি প্রামাণ্য অনুষ্ঠান, ২টি ফিলার ও বিশিষ্টজনদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ প্রচারিত হবে সরাসরি সাক্ষাৎকারভিত্তিক নানা অনুষ্ঠান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১২ ধরনের যানবাহনের জন্য টোলহার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত শাহ আমানত সেতুর বিবেচনায় টানেলের এই টোলহার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে টানেলে সেতুর তুলনায় আড়াই থেকে ছয় শতাংশ বেশি টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। টানেলের টোল কালেকশনে আনোয়ারা প্রান্তে স্থাপন করা হয় পস্নাজা। যেখানে একসঙ্গে ১৪টি যানবাহন টোল দিতে পারবে। তবে টানেল দিয়ে থ্রি হুইলার ও মোটর সাইকেল চলাচল করতে পারবে না।

টানেলে প্রাইভেটকার ও জিপ চলাচলে দিতে হবে ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২৫০ টাকা, পিকআপ ২০০ টাকা, ৩১ বা তার চেয়ে কম সিটের বাস ৩০০ টাকা এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাস চলাচলে দিতে হবে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া পাঁচ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক ৪০০ টাকা, পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাক ৫০০ টাকা এবং আট থেকে ১১ টনের ট্রাক থেকে ৬০০ টাকা টোল আদায় করা হবে।

তিন এক্সেল পর্যন্ত ট্রাক চলাচলে দিতে হবে ৮০০ টাকা, চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেলারকে এক হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য ২০০ টাকা করে বেশি দিতে হবে।