প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

Share This News

এইডস শনাক্ত ও মৃত্যু তিন দশকে সর্বোচ্চ

এইডস শনাক্ত ও মৃত্যু তিন দশকে সর্বোচ্চ

এক বছরে বাংলাদেশে এইডসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু তিন দশকের রেকর্ড ভেঙেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর ১ হাজার ২৭৬ জন নতুন এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ২৬৬ জন।

গত বছর শনাক্ত হয়েছিল ৯৪৭ জনের শরীরে। এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয় ২৩২ জনের। এ বছরের শনাক্ত-মৃত্যুর সংখ্যা তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সরকার এ বছরের প্রতিবেদন তুলে ধরে জানান, গত এক বছরে দেশে নতুন করে এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৬ জন। তার আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৯৪৭। চলতি বছর এইডস রোগীর মধ্যে ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়। আগের বছর মারা যান ২৩২ জন। গত এক বছরে শনাক্ত রোগীর ১৫৮ জনই কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। শনাক্তদের মধ্যে ৮৫০ জন পুরুষ ও ২৭৮ জন নারী। আর ৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ বছর এইডস শনাক্তদের মধ্যে ৩৪২ জন ঢাকার বাসিন্দা। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২৪৬, রাজশাহীতে ১৭৫, খুলনায় ১৪১, বরিশালে ৭৯, সিলেটে ৬১, ময়মনসিংহে ৪০ এবং রংপুর জেলায় ৩৪ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরুষ যৌনকর্মী এবং পুরুষ সমকামীদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যারা ইনজেকশন ব্যবহার করে শিরায় মাদক নেন, সেসব মাদকসেবীও এইডসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এক বছরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। গত ৩৪ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৯৮৪ জন। আর সাড়ে তিন দশকে মৃত্যু হয়েছে ২০৮৬ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান বলেন, এইডস সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ জানতে পারে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সময়। তখন এইডসের পুরো মিনিং জানতে হয়। এ ছাড়া, এইডস নিয়ে আর কোনো প্রচার নেই, এটি আমাদের বড় একটি ঘাটতি। দেশের সব হাসপাতালে এইডসের চিকিৎসা নেই, বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালও নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশ অনেক রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও এইডস নিয়ন্ত্রণে থমকে আছে। সরকার এইডসের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ওষুধসহ সব ধরনের সেবা দিচ্ছে। আমাদের এখানে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসায় রি-ইউজেবল অনেক কিছু ব্যবহার করা হয়। ওই জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, সারা বিশ্বে এখন অবাধ যাতায়াত করছে। ফলে সংক্রামক রোগও দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে যায়। আগে হয়তো অজ্ঞাত রোগ হিসেবে মারা যেত। এখন এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ভালো হওয়ায় রোগী শনাক্ত বেশি হচ্ছে, এইডস আক্রান্তের মৃত্যু এইডস হিসেবেই চিহ্নিত করা হচ্ছে।

ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজের (এফডিএসআর) উপদেষ্টা ডা. আবদুর নূর তুষার বলেন, আমাদের বিজ্ঞাপনে মাদক নেওয়ার সিন দেখানো হয়। এসব দেখে অনেকে উৎসাহিত হয় এবং মাদক নেওয়ার কৌশল রপ্ত করে।