প্রকাশিত : বুধবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৪

Share This News

‘টুয়েলভথ ফেল’ নিয়ে কেন এত আলোচনা?

‘টুয়েলভথ ফেল’ নিয়ে কেন এত আলোচনা?

দ্বাদশ শ্রেণিতে হিন্দি বাদে সব বিষয়ে ফেল করেছিলেন মনোজ। তাতে কী? নিম্নবিত্ত পরিবারের এই যুবক সংগ্রাম করে হয়েছেন ভারতের আইপিএস কর্মকর্তা। এমনই এক সাধারণ গল্প অবলম্বনে নির্মাতা বিধু বিনোদ চোপড়া তৈরি করেছেন সিনেমাটি। অল্প বাজেট হওয়া সত্ত্বেও, ভারতের বক্স অফিসে দারুণ ব্যবসা করছে এই বহুল আলোচিত সিনেমাটি।

“টুয়েলভথ ফেল” নিয়ে রীতিমতো আলোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম । সিনেমাটির বিভিন্ন মুহূর্ত ও সংলাপের পোস্টার ফেসবুকে শেয়ার করছেন অসংখ্য মানুষ। সিনেমাটি দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন দর্শকেরা, বাংলাদেশেও সিনেমাটি নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

সিনেমাটির প্রশংসা সবার মুখে মুখে। ইন্টারন্যাশনাল মুভি ডাটাবেজে (আইএমডিবি) সিনেমাটির রেটিং ১০-এর মধ্যে ৯.২।

সিনেমাটিতে নেই কোনো বড় তারকা। আবার সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে আরও দুই মাস আগে। সাধারণত মুক্তির এতদিন পর কোনো সিনেমা নিয়ে এতটা হইচই খুব একটা দেখা যায় না। তাই, যারা এখনও সিনেমাটি দেখেননি; তাদের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, দুই মাস আগে মুক্তি পাওয়া বড় তারকাবিহীন কম বাজেটের এই সিনেমা নিয়ে হঠাৎ কেন এত আলোচনা?

সিনেমাটি গত ২৭ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এরপর ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে ডিজনি প্লাস হটস্টারে। এরপর থেকেই ভারতের বাইরের দর্শকেরও নজর কাড়ে সিনেমাটি।

“টুয়েলভথ ফেল” সিনেমাটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। যেখানে উঠে এসেছে মনোজ কুমার শর্মা নামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের এক তরুণের ভারতের প্রথম সারির সরকারি কর্মকর্তা “আইপিএস অফিসার” হয়ে ওঠার সংগ্রামের গল্প।

দেশটির উত্তরাঞ্চলের অনিয়ম আর দুর্নীতিপ্রবণ এলাকা চাম্বালে জন্ম মনোজ শর্মার। যেখানে স্কুলগুলোতেও চলে নকল করার উৎসব। এমনকি পরীক্ষার হলে শিক্ষকরা বোর্ডে উত্তর লিখে দেন। এমন এলকাতেও সততা নিয়ে বাঁচতে চায় মনোজের বাবা। অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ না করায় হারাতে হয় চাকরি। সংসারের খরচ যোগাতে গাড়ি চালানোর কাজ শুরু করে মনোজ ও তার ভাই। কিন্তু সেখানেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় অনিয়ম। ঘটনাক্রমে এক সৎ পুলিশ অফিসারের দেখা পায় মনোজ। সেখান থেকেই নিজেও একদিন বড় অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে। মনোজ তখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ অফিসারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে পরীক্ষায় নকল করা ছেড়ে দেয় মনোজ। আর তাতেই দ্বাদশ শ্রেণিতে ফেল করে মনোজ। মূলত সেখান থেকেই সিনেমার নামকরণ করা হয়েছে “টুয়েলভথ ফেল”।

তবে ফেল করেও দমে যায়নি মনোজ। নিজের চেষ্টায় পরীক্ষায় পাশ করে সে। এরপর কঠোর পরিশ্রম করে বিএ পাশ করে সে, যদিও রেজাল্ট সাধারণ মানের। দাদির অনুপ্রেরণায় পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্নে শহরে যায় সে। সেখানেই ঘটনাক্রমে পরিচয় ঘটে প্রীতম পান্ডের সঙ্গে। আইপিএস অফিসার হওয়ার নতুন স্বপ্ন দানা বাঁধে তার মনে। অক্লান্ত পরিশ্রম, নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যেতে থাকে মনোজ। আর তার এই সংগ্রামে নানাভাবে সহযোগিতার পাশাপাশি সাহস যোগাতে  থাকে বন্ধু পান্ডে, প্রেমিকা শ্রদ্ধা, গৌরি ভাইয়াসহ অনেকে। শ্রম ও সংগ্রাম শেষে ইন্টারভিউ বোর্ডের নাটকীয় ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত আইপিএস অফিসার হয় মনোজ।

আর এই বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি মনে ধরেছে দর্শকদের। অদম্য ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যে মানুষের পক্ষে যেকোনো বাঁধা অতিক্রম করা সম্ভব; সেটিই “মোটিভেশন” হয়ে উঠেছে সিনেমাটি। আর তাই ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণার আরেক নাম হয়ে উঠেছে “টুয়েলভথ ফেল”। সেই সঙ্গে ভারতের সুবিধাবঞ্চিত ও চাকরপ্রার্থী কোটি কোটি তরুণের স্বপ্ন ও সংগ্রামের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে পর্দার মনোজ। যা আবেগতাড়িত করেছে সিনেমার দর্শকদের।

সিনেমায় মনোজ চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রান্ত ম্যাসি। তার নিখুঁত অভিনয় গল্পটিকে দর্শকদের কাছে অনেক বেশি জীবন্ত করে তুলেছে। মনোজের প্রেমিকা আইআরএস কর্মকর্তা শ্রদ্ধা জোশি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেধা শংকর। এছাড়া পান্ডে চরিত্রে অনন্ত ভি জোশি, গৌরী ভাইয়া চরিত্রে অংশুমান পুশকর, ডিএসপি দুশান্ত চরিত্রে প্রিয়াংশু চ্যাটার্জিসহ সিনেমার সব পার্শ্বশিল্পীদের অভিনয়ও ছিল দুর্দান্ত। আর সেজন্যই সিনেমাটি দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

“টুয়েলভথ ফেল” সিনেমাটি পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন বিধু বিনোদ চোপড়া। অনেকের মতে, “২০২৩ সালের সেরা নির্মাণের” জন্য টুপিখোলা অভিবাদন পাওয়ার যোগ্য বিধু বিনোদ চোপড়া।