প্রকাশিত : শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

Share This News

বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে বাংলাদেশের অবনতি

বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে বাংলাদেশের অবনতি

অপ্রত্যাশিত মন্দায় পড়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুই অর্থনীতি। পরপরই দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার হতাশাজনক চিত্র বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে জাপান ও যুক্তরাজ্য সরকার। মন্দার কারণে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির মুকুট হারিয়েছে জাপান। এ স্থান দখল করেছে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি। 

বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ দুই মিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী জাপান ও যুক্তরাজ্য মন্দায় নিপতিত হওয়ায় আমাদের ওপরেও এর কিছুটা ধাক্কা লাগতে পারে। বিশেষ করে রপ্তানি বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়তে পারে। আমাদের তৈরি পোশাকের অন্যতম বাজার এই দুটি দেশ। গত অর্থবছরে জাপানে ১২২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়। এ ছাড়া গত বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করা হয় ৩ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। 

এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, দুই দেশের অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কিছুটা হলেও আমাদের ওপর পড়তে পারে। 

তিনি বলেন, দুটি দেশই আমাদের তৈরি পোশাকের উল্লেখযোগ্য বাজার। জাপান আমাদের অন্যতম দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। এসব দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হলে এর নেতিবাচক প্রভাব শুধু রপ্তানির ওপর নয়, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগিতার ওপরেও পড়বে। তবে দেখতে হবে তাদের মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হয় কিনা। দীর্ঘমেয়াদি মন্দা না হলে আমাদের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। জাপান ও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির এই দুঃসংবাদ এমন সময় এলো, যখন ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বব্যাপী অনুভূত হচ্ছে। 

গত মাসে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ একটি দুঃখজনক রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। গত ৩০ বছরের মধ্যে জিডিপি বৃদ্ধির সবচেয়ে ধীরগতির অর্ধ দশক দেখবে বিশ্ব।  অবশ্য বহুজাতিক ঋণদাতা ব্যাংকটির সর্বশেষ গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্টে বলা হয়েছে,  বিশ্ব অর্থনীতি এক বছর আগের তুলনায় ভালো জায়গায় রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মন্দার ঝুঁকি কমে গেছে মূলত মার্কিন অর্থনীতির তেজিভাবের কারণে। তবে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নতুন নিকট-মেয়াদি বিপদ তৈরি করতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস হচ্ছে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি টানা তৃতীয় বছরে কমতে পারে। গত বছরের ২.৬ শতাংশের বিপরীতে চলতি বছর  প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২.৪%। 

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিও মন্দার মধ্যে পড়েছে বলে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। যুক্তরাজ্য অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) বৃহস্পতিবার বিবৃতিতে বলেছে, দেশটির জিডিপি তৃতীয় প্রান্তিকে ০.১ শতাংশ সংকোচনের পরে ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে ০.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

ওএনএস বলেছে, ২০২৩ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে জিডিপিতে পতন ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসের পর সবচেয়ে বড়। জিডিপির তথ্য প্রকাশের পরপরই মার্কিন ডলার এবং ইউরোর বিপরীতে স্টার্লিং কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ব্রিটেনের অর্থনীতি প্রায় দুই বছর ধরে স্থবির হয়ে আছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলেছে, এটি ২০২৪ সালে কিছুটা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই  ধীরগতির বৃদ্ধি এ বছরের জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে বেকায়দায় ফেলতে পারে। 

অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, ব্রিটিশ অর্থনীতির প্রান্তিক অবস্থায় পরিণত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য কর্মসংস্থান এবং ব্যবসার ওপর কর কমানো দরকার। খবরে বলা হয়েছে, জেরেমি হান্ট ৬ মার্চের বাজেটে সরকারি খরচ বিলিয়ন পাউন্ড কমাতে চাচ্ছেন। 

ফোর্বস ইন্ডিয়ার তথ্য অনুসারে, বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান এখন জাপানের পর, অর্থাৎ পঞ্চম। এর পর আছে যথাক্রমে– যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিল ও কানাডা।

মন্দায় জাপান

জাপানের অর্থনীতি অপ্রত্যাশিতভাবে মন্দার মধ্যে পড়েছে। দেশটির অর্থনীতি এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম। দুর্বল ইয়েন, প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং জনসংখ্যা সংকুচিত হওয়ার কারণে জার্মানির নিচের চলে গেছে জাপান। 

জাপানের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এক বছরের আগের তুলনায় ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে ০.৪% সংকুচিত হয়েছে। এর আগের প্রান্তিকে জিডিপি কমেছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

তবে জাপান বড় ধরনের সংকটে নেই। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিভাগের প্রধান মার্সেল তিলিয়ান্ত বলেন, দেশটিতে বেকারত্বের হার খুবই কম এবং বাণিজ্যের জন্য দেশটি ভালো অবস্থানে আছে।

চীনের কাছে দ্বিতীয় স্থানের মুকুট হারানোর এক দশকেরও বেশি সময় পরে এবার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির মর্যাদাও হারাল দেশটি।  গত দুই বছরে ডলারের বিপরীতে ইয়েনের বড় ধরনের দর পতনকে এজন্য দায়ী করা হয়।

একসময় বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ছিল জাপানের অবস্থান। ২০১০ সালে চীনের অর্থনৈতিক দাপটের কাছে হার মেনে সেই স্থান হারায় সূর্যোদয়ের দেশটি।

অর্থনীতিবিদরা আশা করেছিলেন, জাপানের জিডিপি গত বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ১ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাবে।  পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সংকুচিত হলে তাকে সাধারণত প্রায়োগিক মন্দা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গত অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছিল, মার্কিন ডলারে পরিমাপ করা হলে জার্মানি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে জাপানকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। উভয় দেশ তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যানের চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশ করার পরেই আইএমএফ তার র‌্যাঙ্কিংয়ে পরিবর্তন ঘোষণা করবে। 

অর্থনীতিবিদ নিল নিউম্যান বিবিসিকে বলেছেন, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে জাপানের অর্থনীতির আকার ছিল প্রায় ৪.২ ট্রিলিয়ন ডলার আর জার্মানির ৪.৪ ট্রিলিয়ন ডলার।