প্রকাশিত : শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

Share This News

ডিসকলেজিয়েট করার প্রতিবাদে রাবির ৮ শিক্ষার্থীর অনশন

ডিসকলেজিয়েট করার প্রতিবাদে রাবির ৮ শিক্ষার্থীর অনশন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের আট শিক্ষার্থী তাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে ডিসকলেজিয়েট করে দেওয়ার প্রতিবাদে অনশন করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

এর আগে বিভাগের সামনে থেকে এক পদযাত্রা বের করে প্রশাসন ভবনের সামনে মিলিত হন তারা। দুপুর দেড়টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় প্রশাসন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরাও উপস্থিত আছেন।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন- গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর থিসিস ও নন-থিসিস পর্যায়ের আট শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, ফয়সাল আহমেদ, তানভির, জয়শ্রী, রিতু পর্না, ফারজানা ইয়াসমিন, ফাতিমা আফরিন মিম ও অনামিকা। অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন একই ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল।

অনশন কর্মসূচিতে ‘চারুকলায় অন্যায় চলে, ভিসি স্যার ঘুমাচ্ছেন কেমন করে’, ‘সন্দেহজনক সিগনেচার শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার’, ‘নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে, শিক্ষক আসেন ১২টার পরে’, ‘কর্মচারী দিয়ে উপস্থিতি, প্রশাসনে আছে কি এই রীতি?’, ‘দিনের পর দিন শিক্ষকের মানসিক অত্যাচার, কে করবে এর বিচার?’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগের মোট ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আটজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম এটেন্ডেন্স দেখিয়ে ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে, যেটা অফিসিয়ালি তাদেরকে কোনোভাবে জানানো হয়নি। নিয়মিত ক্লাস করার পরও এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। শ্রেণি শিক্ষক প্রতিদিন ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ডিপার্টমেন্টে আসেন, যেখানে তিনি তাদের সাড়ে নয়টা থেকে ক্লাসে থাকতে বলতেন এবং বিভিন্ন কর্মচারী ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকে শুনে তার ভিত্তিতে এটেন্ডেন্স দিতেন। এই নিয়মের ফলে শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্লাসে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অনুপস্থিত হিসেবে চিহ্নিত হন।

আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের একজন মেহেদী হাসান বলেন, প্রতি মাসের শেষে আমাদের কাছ থেকে এটেন্ডেন্স খাতায় স্বাক্ষর নেওয়া হতো। শিক্ষকের ওপর আস্থা রেখে আমরা স্বাক্ষর করে দিতাম। পরবর্তীতে এই স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ইচ্ছাকৃতভাবে কম এটেন্ডেন্স দেখিয়ে আমাদের ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে। 

ফাতিমা আফরিন মিম বলেন, আমাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে ডিসকলেজিয়েট করে আমাদের জীবনকে ধ্বংসের পথে নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবিতে আমরা সকাল থেকে আমরণ অনশনে বসেছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে উঠব না। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল বলেন, আমি হুমকি দেওয়ার কে? ক্লাসতো আরও কয়েকজন শিক্ষক নিয়েছে, আমিতো একা নিইনি? আপনারা অফিসে এসে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কাগজপত্র সব রেডি আছে। তারা ক্লাস করার পর মাস শেষে অ্যাটেন্ডেন্স শিটে স্বাক্ষরও করেছে। সব সাক্ষ্য প্রমাণ আছে। এখন তারা যদি ক্লাস না করে, তাহলে আমি কীভাবে কী করব? দয়া করে উপস্থিতি দেখানোর ক্ষমতা আমার নেই। তাদের সঙ্গে তো আমার ব্যক্তিগত খারাপ সম্পর্কও নেই।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, একজন শিক্ষক কি এভাবে কাউকে ডিসকলেজিয়েট করতে পারে? তারা ক্লাসে অনিয়মিত ছিল। নিয়ম অনুযায়ী তারা ডিসকলেজিয়েট হয়েছে।

এর আগে ঘটনার সমাধানে হস্তক্ষেপ কামনা করে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে সঠিক কোনো সমাধান না পাওয়ায় আজ তারা আমরণ অনশনে বসেন। পরে এদিন বিকেল ৪টায় উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন স্থগিত করে বিভাগে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। তবে কাঙ্ক্ষিত সমাধান না পেলে পুনরায় অনশনে বসবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।