যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের দখলে নেওয়া ভবনে প্রবেশ করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে পুলিশের বিশাল বহর ভবনটিতে প্রবেশ করে। এতে সেখানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, দাঙ্গার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছায়। তারা উত্তেজিত জনতার ভিড় ছত্রভঙ্গ করার আধুনিক অস্ত্র, লাঠি, বিশেষ গাড়ি, এপিসি, যন্ত্রচালিত মই নিয়ে সেখানে অবস্থান নেয়। হেলমেট পরা সব সদস্যই ছিলেন মারমুখী।
ক্যাম্পাসে বিপুল পুলিশ পৌঁছানোর পর রাতে ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীদের দখলে নেওয়া একাডেমিক ভবন হ্যামিল্টন হলে ক্রেনের মতো গাড়ি থেকে মই লাগিয়ে জানালা দিয়ে একে একে তারা প্রবেশ করে।
পুলিশ জানায়, ভবনটি নিরাপদ করা, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে সেখান থেকে বের করা এবং গ্রেপ্তারের উদ্দেশে একটি অভিযান হতে যাচ্ছে।
এর প্রায় ২৪ ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভবনটিতে প্রবেশ করেন। এরপর তারা ভবনের প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে ভেতরে অবস্থান নেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যামিল্টন হলে অভিযান শুরু হয়ে গেছে। তবে সেখানে ঠিক কী হচ্ছে বা কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানা যায়নি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিতর্ক চলছিল। তখন থেকে দুটি পক্ষ সক্রিয় হয়ে উঠে।
একটি পক্ষ গাজা যুদ্ধকে অনৈতিক দাবি করে গণহত্যা বন্ধে কর্মসূচি পালন শুরু করে। তারা ইহুদিবিরোধী প্রচার অব্যাহত রাখে।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যান্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ইসলামভীতি বাড়তে থাকে।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে কলাম্বিয়া ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে উঠে। সেখানে হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। এতে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সে সঙ্গে পুলিশের গণগ্রেপ্তার অব্যাহত থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।
এদিকে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয় কলাম্বিয়া কর্তৃপক্ষ। তবে সেই নির্দেশনা অমান্য করে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়েই অবস্থান করেন।
একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষের আলটিমেটামের সময়সীমা পার হয়ে গেলেও বিক্ষোভ থেকে শিক্ষার্থীরা সরে না আসায় তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানায় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম সংগঠন কলাম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন (এসজেপি) সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের তাঁবুতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সংগঠনটি এরপর হ্যামিল্টন হল দখলের কথা ঘোষণা দেয়। তারা জোর দিয়ে বলে, একাডেমিক ভবনটি ১৯৬৮ সালে ছাত্র বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
বিক্ষোভকারী আরেক সংগঠন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপার্থেইড ডাইভেস্ট (সিইউএডি) বলেছে, এ বছরের শুরুতে গাজায় মৃত অবস্থায় পাওয়া ছয় বছর বয়সী মেয়ে হিন্দ রাজাবের সম্মানে ভবনটি দখল করেছে তারা।