প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

Share This News

পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়লেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়লেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে ছয় ঘণ্টা পর রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় ছেড়েছেন সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল প্রতিবাদে ও ২০১৮ সালের কোটা পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিন বেলা ১২টা থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। শাহবাগে অবস্থান শেষ করে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির দিকে এগিয়ে যান তারা। ফলে ৬ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।

পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়লেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

আন্দোলনের প্রধান সমন্বায়ক নাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘোষিত চার দফা দাবির ভিত্তিতে আগামী শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইনে আমাদের জনসংযোগ কর্মসূচি চলবে। যেটি কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করা হবে। আগামী শনিবার বিকাল ৩টায় দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। রোববার সারা দেশে সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা হবে।

নাহিদুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের নির্বাহী বিভাগ বা উচ্চ পর্যায় থেকে আমাদেরকে কোনো রকম আশ্বস্ত করা হয়নি, এমনকি কোনো ধরনের যোগাযোগও করা হয়নি। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকার কী পরিপত্র জারি করল যে যেটি পাঁচ বছরের মধ্যে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে হাইকোর্ট? তার মানে পরিপত্র জারি যথাযথ নিয়ম মেনে হয়নি।

এখনো সময় আছে পুনরায় পরিপত্র জারি করার। আইন বিভাগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করে দেয়ার এই নাটক আর মঞ্চস্থ করতে দেয়া হবেনা। বক্তব্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদও জানান তিনি।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন সকল বৈষম্য দূর করার জন্য। এই কোটার মাধ্যমে মেধাবীদের সঙ্গে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এই কোটা অবিলম্বে বাতিল করে সংবিধান ঘোষিত সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগে সকালে ২০১৮ সালের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া উচ্চ আদালতের রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে মিছিল ও স্লোগান নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন তারা। দুপুর ১২টার সময় হাজারো শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। তাদের অবরোধের পর ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন অবরোধ কর্মসূচিতে। ফলে শাহবাগের আশপাশের সড়কের দুপুর বারোটা থেকে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

দীর্ঘ ৬ ঘন্টা ধরে লাগাতার অবস্থানে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, আপোষ না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে-কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে-ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়াও কোটা বিরোধী গান-কবিতায় তারা মুখর করে রেখেছিলেন চারপাশ।

শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসহ ৪টি দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন। দাবিগুলো হলো-

১। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।

২। ১৮’ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

৩। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।

৪। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।