প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪

Share This News

অস্থির পুঁজিবাজারের অনিশ্চয়তায় স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা: প্রফেসর ইউনুসের হস্তক্ষেপে সম্ভব পুনর্জাগরণ?

অস্থির পুঁজিবাজারের অনিশ্চয়তায় স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা: প্রফেসর ইউনুসের হস্তক্ষেপে সম্ভব পুনর্জাগরণ?

রেজুয়ান আহম্মেদ

নীলিমার আকাশের নিচে লুকিয়ে থাকা বেদনা ও হতাশার কথামালায় মোড়ানো আমাদের শেয়ারবাজারের বর্তমান চিত্রটি অনেকটাই ঘোলাটে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর একসময়ের খরস্রোতা নদীর মতো প্রবাহমান ছিল দেশের শেয়ারবাজার। প্রতিটি বিনিয়োগকারীর মনোবাসনা ছিল তাদের কষ্টের টাকা যেন নিরাপদে বেড়ে ওঠে। কিন্তু সেই আশার বেলুন ফেটে যাওয়ার মতোই মাত্র চার কর্মদিবস পরই শুরু হয়েছিল ধারাবাহিক পতনের এক অশুভ সময়।

এই অস্থিরতার মূল কারণগুলো স্পষ্ট হলেও ভয়াবহ। বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত ইসলামের পদত্যাগের পর বাজারের পতনের হার এমনভাবে বৃদ্ধি পায় যা ভাবাই যায় না। প্রতিটি দিনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা যেমন আশা নিয়ে আসেন, ঠিক তেমনি হতাশা নিয়ে দিন শেষ করেন। এই অবস্থাকে বিশ্লেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন প্রেতাত্মার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে, যেখানে শিবলীর পদচ্যুতির পরও তার অনুসারীরা বাজারে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

যারা নিয়মিতভাবে শেয়ারবাজারের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেন, তারা বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে, নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের যোগদানের পরও শিবলীর প্রেতাত্মারা তাদের সেল প্রেসার বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন সকালেই শেয়ারবাজারে লাখ লাখ শেয়ার নিম্নদরে দাঁড়িয়ে থাকে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার করে। কোনো নতুন বিনিয়োগকারী যখন এমন দৃশ্য দেখেন, তখন তার মনের গভীরে এক ধরনের অসহায়ত্বের বোধ জন্ম নেয়।

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য ছোট বিনিয়োগকারীদের চোখে একমাত্র আশার আলো হিসেবে জ্বলজ্বল করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের দিকে। তাঁর বহুল প্রচারিত সামাজিক ব্যবসার ধারণা যদি শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, তাহলে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ স্বল্প বিনিয়োগকারী নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারেন। 

প্রফেসর ইউনুস, যিনি গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে একটি সফল মডেল তৈরি করেছেন, তিনি যদি শেয়ারবাজারের দিকে মনোনিবেশ করেন, তাহলে তিনি এখানে একধরনের সামাজিক শেয়ারবাজার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। যেখানে ছোট বিনিয়োগকারীরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। শেয়ারবাজারে এই ধরনের উদ্যোগ একধরনের মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তার বোধ এনে দিতে পারে।

শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, তারা জানেন যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আনার জন্য প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ। কিন্তু সেই পদক্ষেপগুলি কখনই যথাযথভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে না। এখানে যে প্রয়োজন, তা হলো বিশ্বাসের পুনরুদ্ধার। বাজারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা এবং শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস যদি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তবে তিনি এখানে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসতে পারেন, যেখানে স্বল্প বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ মনে করতে পারেন। তার সামাজিক ব্যবসার ধারণা শেয়ারবাজারে প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি একটি আদর্শিক পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হবে।

বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে এবং শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করতে যদি প্রফেসর ইউনুসের মতো একজন দক্ষ ও বিশ্বমানের অর্থনীতিবিদ এগিয়ে আসেন, তবে ভবিষ্যতে এই বাজার নতুন আলোতে উদ্ভাসিত হতে পারে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন একজোট হয়ে কাজ করা এবং প্রেতাত্মাদের হাত থেকে বাজারকে রক্ষা করা।

যদিও বর্তমানের এই অস্থির সময়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, তবুও আশার আলো এখনও নিভে যায়নি। প্রফেসর ইউনুস যদি শেয়ারবাজারে একধরনের সামাজিক বিনিয়োগ মডেল প্রয়োগ করেন, তাহলে এই বাজার আবারও বাঁচবে এবং স্বল্প বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখবে। একসময় যারাই শেয়ারবাজারে পুঁজি হারিয়েছেন, তারাও ফিরে আসতে পারবেন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত বিনিয়োগের পথ খুঁজে পাবেন।

 

রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম