প্রকাশিত : বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Share This News

চীন কি আসলেই ভারতের সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে?

চীন কি আসলেই ভারতের সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে?

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে যে, চীন ভারতের সিকিম অঞ্চলের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। এই খবরটি নিয়ে ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এই খবরটি কতটা সত্য? এবং আসলেই চীন ভারতের সিকিমের অংশ দখল করেছে কিনা?

ভারত ও চীনের সীমান্ত সংঘাত দীর্ঘদিনের। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিবাদ বহু পুরনো, বিশেষ করে লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিম অঞ্চলে। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা অনেক বেড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সিকিমে চীনা বাহিনীর ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখলের খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি।

ভারত সরকার চীনের সঙ্গে সীমান্ত সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখে। সিকিমে চীনের কোনো প্রকার অগ্রগতি নিয়ে এখন পর্যন্ত ভারত সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সরকার এমন কোনো খবর নিশ্চিত করেনি যে, চীন সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখল করেছে।

যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটত, তাহলে তা ভারতের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা হতো। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের বড় ঘটনা চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে আরো জটিল করতে পারে। ফলে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লুকিয়ে রাখার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

চীনও সিকিম দখলের বিষয়টি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। সীমান্ত নিয়ে চীন এবং ভারতের মধ্যে আলোচনা চলছে, এবং উভয় দেশই কূটনৈতিক উপায়ে এই সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। সিকিম নিয়ে চীনের দাবির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যা এই দখলের দাবি সমর্থন করে।

ভারত ও চীনের সীমান্তে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। দুই দেশের মধ্যে মাঝে মাঝেই সীমান্ত সংঘর্ষ এবং ছোটখাটো ঘটনার খবর পাওয়া যায়। তবে সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখলের মতো বড় ধরনের ঘটনা ঘটলে তা বিশ্ব রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারত। এমন খবর এখনো বিশ্বমানের সংবাদমাধ্যমে উঠে আসেনি, যা প্রমাণ করে যে এই খবরটি গুজব হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে ভিত্তিহীন খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক কারণে গুজব তৈরি করা হয়। চীন ও ভারতের মধ্যকার সীমান্ত সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কিত খবর ছড়ানোর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। বিশেষ করে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরো জটিল করার জন্য এমন ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হয়ে থাকতে পারে।

চীনের সিকিমের ৬০ কিলোমিটার এলাকা দখলের খবরটি এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে নিশ্চিত করা যায়নি। ভারত সরকার কিংবা চীন সরকারও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ ধরনের কোনো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি যা এই দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে পারে। ফলে, এই খবরটি গুজব এবং ভিত্তিহীন বলে মনে হচ্ছে। তবে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রের উপর নির্ভর করে যে কোনো তথ্য বিশ্বাস করা উচিত।