প্রকাশিত : শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Share This News

মুসলিম সমাজের প্রতি করিম চাচার খোলা চিঠি

মুসলিম সমাজের প্রতি করিম চাচার খোলা চিঠি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা,

আমাদের জীবনে মসজিদের গুরুত্ব কতখানি, তা ব্যাখ্যা করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। ছোটবেলা থেকেই আমরা জানি মসজিদ হলো শান্তির স্থান, ইবাদতের স্থান। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার পবিত্র স্থান। কিন্তু আজকের ঘটনার পর আমি এক গভীর দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি।

আজকের যে ঘটনা ঘটেছে, তা মসজিদের মূল আদর্শকে অবমাননা করেছে। বায়তুল মোকাররম, আমাদের দেশের জাতীয় মসজিদ, যা কিনা শান্তির প্রতীক, সেখানে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? আমাদের পবিত্র ইবাদতখানা কেন সংঘর্ষের স্থান হয়ে উঠবে? আমাদের প্রিয় ধর্ম কি এটাই শিক্ষা দেয়?

মসজিদের প্রয়োজনীয়তা ও আমাদের কর্তব্য

মসজিদ শুধু নামাজ আদায়ের স্থান নয়। মসজিদ হলো একটি সামাজিক শিক্ষা কেন্দ্র, যেখানে আমরা একে অপরের প্রতি দায়িত্ব ও শ্রদ্ধা শেখার সুযোগ পাই। মহানবী (স.) মসজিদকে শুধু নামাজের স্থান হিসেবে দেখেননি, তিনি মসজিদকে এমন একটি স্থানে পরিণত করেছিলেন যেখানে শিক্ষা, দানশীলতা এবং সামাজিক সংহতি বিস্তৃত হয়েছিল।

কিন্তু আমরা আজ সেই শিক্ষাকে কোথায় হারিয়ে ফেলেছি? আজ আমাদের সমাজে মসজিদে সংঘর্ষ, বিরোধ, এমনকি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে। মসজিদ এখন আর সেই শান্তির আশ্রয় নয়, বরং কিছু মানুষের স্বার্থের হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

মসজিদের মূল ভূমিকা থেকে আমরা সরে যাচ্ছি

যখন মসজিদে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, তখন প্রশ্ন উঠবেই: আমরা কি ভুল পথে হাঁটছি? আমরা কি আল্লাহর ঘরকে ইবাদতের স্থান থেকে রাজনৈতিক আদর্শের মাঠ বানিয়ে দিচ্ছি?

আজকের বায়তুল মোকাররম মসজিদের ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি আমাদের মুসলিম সমাজের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। আমাদের ভেবে দেখতে হবে আমরা আসলে কী করছি। ইবাদতের সময় কেন বিরোধ হবে? কেন শান্তির স্থানে সংঘাতের সৃষ্টি হবে?

মসজিদের রাজনৈতিক ব্যবহার এবং আমাদের দায়িত্ব

দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আজ অনেক জায়গায় মসজিদকে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মসজিদকে ব্যবহার করতে চান, যা সম্পূর্ণভাবে ইসলামের মূল আদর্শের বিরোধী। ইসলামে মসজিদের ভূমিকা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রচার বা বিরোধিতার জন্য নয়।

আমাদের সমাজে এখন মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করা হচ্ছে। কিছু মানুষ ধর্মের নামে মসজিদের ভেতরে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করছে, যার ফলে ইবাদতের স্থানে বিরোধ ও সংঘর্ষ তৈরি হচ্ছে। আমরা কি ভুলে গেছি, আমাদের ধর্ম ইসলাম শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা দেয়?

একটি উত্তরণের প্রয়োজন

আজকের ঘটনার পর আমাদের সমাজে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, মসজিদ কি আসলেই এখন শান্তির স্থান? আমি বলব, হ্যাঁ, মসজিদ শান্তির স্থান, তবে আমাদের সেই শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।

আমাদের দরকার মসজিদের মূল উদ্দেশ্য পুনরুদ্ধার করা। মসজিদ হবে এমন একটি স্থান যেখানে আমরা একত্রে নামাজ আদায় করব, একে অপরের পাশে দাঁড়াব, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। মসজিদ হবে আমাদের মানসিক শান্তির কেন্দ্র, কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক বিভেদের জায়গা নয়।

প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হলো মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা। মসজিদকে ইবাদতের স্থানেই সীমাবদ্ধ রাখা দরকার, যেন তা কোনো বিরোধ বা সংঘাতের স্থান না হয়।

মসজিদের পবিত্রতা ফিরিয়ে আনার উপায়

আমাদের সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির, বিশেষ করে তরুণদের, মনে রাখা উচিত যে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব। প্রথমে আমাদের নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য তৈরি করতে হবে।

১. ইসলামের শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া: আমাদের ধর্মের মূল শিক্ষা হলো ভ্রাতৃত্ব, সহনশীলতা ও শান্তি। ইসলামের এই শিক্ষাকে আমাদের নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং মসজিদকে সেই শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

২. মসজিদে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার বন্ধ করা: আমাদের মসজিদগুলিকে শুধুমাত্র ইবাদতের স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি মসজিদকে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের স্থান হিসেবে ব্যবহার করে, তা বন্ধ করতে হবে।

৩. সমাজের নেতৃত্বের দায়িত্ব: সমাজের প্রবীণ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করতে উদ্যোগী হতে হবে। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে এবং সংঘর্ষ ও বিরোধ থেকে দূরে রাখতে হবে।

 

শেষ কথা

প্রিয় মুসলিম সমাজ, মসজিদ আমাদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এটি আমাদের জন্য একটি আশ্রয়, শান্তি ও প্রার্থনার স্থান। আমরা যদি এই পবিত্র স্থানের প্রতি সম্মান হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমাদের সমাজের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাবে।

আজকের বায়তুল মোকাররমের ঘটনা আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। আমরা যদি আমাদের ধর্মের মূল আদর্শে ফিরে না যাই, যদি আমরা মসজিদকে তার সঠিক পবিত্রতা ও সম্মান না দিই, তবে আমাদের সমাজ আরও বিভক্ত হয়ে পড়বে।

আসুন, আমরা সবাই একত্রিত হই, মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করি এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলি। আসুন, আমরা মসজিদকে আবারও শান্তির আশ্রয় বানাই, বিরোধের স্থান নয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন এবং আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার তৌফিক দিন।

ইতি, আপনাদেরই এক মুসলিম ভাই, করিম চাচা