প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Share This News

‘আগামীকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে দেওয়া হবে না’

‘আগামীকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে দেওয়া হবে না’

আগামীকাল বুধবার থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো অবস্থায় অবনতি হতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা উস্কানির মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করতে চায়। 

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক এবং মালিক পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা গার্মেন্টস মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ দীর্ঘ সময় আলোচনার পর সমঝোতায় পৌঁছেছি। এ সমঝোতা স্মারকে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করেছে। সবাইকে এটা মেনে চলতে হবে, এই অঙ্গীকার করতে হবে, এই চুক্তি থেকে আমাদের পিছু হটার কোনো কারণ বা অবকাশ নেই। কোনো তালবাহানা করা যাবে না।

তিনি বলেন, আগামীকাল (বুধবার) থেকে সব শিল্প-কারখানা সচল দেখতে চাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা মাধ্যমে এই শিল্পকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু দেশ থেকে নয়, বিদেশ থেকেও হচ্ছে। এই শিল্প যদি বাইরে চলে যায়, তাহলে আমাদের কী হবে, সে বিষয়ে সবাইকে চিন্তা করতে হবে। পরিশেষে আমি একটাই কথা বলব, আইন আপনারা নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না।

তিনি আরও বলেন, আমি আগামীকাল থেকে আশা করব কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন ইন্ডাস্ট্রি এলাকায় না হয়। এটার ব্যত্যয় ঘটলে আপনারাই এজন্য দায়ী থাকবেন। কারণ আপনারা সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। সে সময় আপনারা পিছপা হতে পারবেন না। এখানে যারা উপস্থিত আছেন, সবাই যদি চেষ্টা করেন তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনোভাবেই অবনতি হবে না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিক ভাই-বোনদের কাছে আবেদন করছি, আপনারা শুধু স্বাক্ষর করলে চলবে না। মনের ভেতর থেকে আসতে হবে যে, এই শিল্পই আমাদের বাঁচাবে। এই শিল্পই আমাদের সবকিছু দিয়ে যাচ্ছে। শুধু আপনাদের নয়, জনগণকে অনেক কিছু দিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্পের ওপর দেড় কোটি নয়, পুরো বাংলাদেশের মানুষ নির্ভরশীল। এ জন্য আপনাদের নজর রাখতে হবে।

এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, মালিক-শ্রমিক কোনো পক্ষ ১৮টি দাবি মেনে নেওয়া বা বাস্তবায়নের বিষয়ে আপত্তি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি দেশের শিল্পকে বাঁচানোর জন্য আগামীকাল বুধবার থেকে সব শ্রমিককে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

শ্রমিকদের ১৮ দাবি হলো :

১. মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনপূর্বক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।

২. যেসব কারখানায় ২০২৩ সালে সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩. শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে।

৪. কোনো শ্রমিকের চাকরি পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে অথবা চাকরিচ্যুত হলে একটি বেসিকের সমান অর্থ দিতে হবে, এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক শ্রম আইনের ২৭ ধারাসহ অন্য ধারাগুলো সংশোধন করতে হবে।

৫. সব ধরনের বকেয়া মজুরি অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।

৬. হাজিরা বোনাস (২২৫ টাকা), টিফিন বিল (৫০ টাকা), নাইট বিল (১০০ টাকা) সব কারখানায় সমান হারে বাড়াতে হবে।

৭. সব কারখানায় প্রভিডেন্ট ফান্ড ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৮. বেতনের বিপরীতে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ন্যূনতম ১০ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। ৯. শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

১০. বিজিএমইএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক ব্ল্যাকলিস্টিং করা যাবে না, বায়োমেট্রিক তালিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

১১. সব ধরনের হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

১২. ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইন করতে হবে।

১৩. কল-কারখানায় বৈষম্যবিহীন নিয়োগ দিতে হবে। ১৪. জুলাই বিপ্লবে শহীদ এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

১৫. রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে তদন্তান্তে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৬. শ্রম আইন অনুযায়ী সব কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করতে হবে।

১৭. অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে।

১৮. নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণ করতে হবে।