প্রকাশিত : শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩

Share This News

বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মীদের ঢল

বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মীদের ঢল

গত ১৯ জুলাই শেয়ারনিউজে ‘নিলামে উঠছে এমারাল্ড অয়েল কোন পথে যাবে বিনিয়োগকারীরা!’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন এমারাল্ড কর্তৃপক্ষ। একই সংবাদ নিয়ে কিছু শব্দগত ভুলের কারণে প্রতিবাদ জানিয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। তবে নিলামের বিষয়ে এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলেও বেসিক ব্যাংক পরিস্কার করে দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির এমারাল্ড অয়েল ও বেসিক ব্যাংকের প্রতিবাদ ও বক্তব্য এবং প্রতিবেদক ও শেয়ারনিউজের বক্তব্য নিচে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো:-

এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষের প্রতিবাদ ও বক্তব্য

“শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল গত বুধবার (১৯ জুলাই) ‘নিলামে উঠছে এমারাল্ড অয়েল কোন পথে যাবে বিনিয়োগকারীরা!’ শীর্ষক সংবাদটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নিউজপোর্টালটির প্রতিবেদক তথ্যের যাচাই বাছাই ছাড়াই সংবাদ প্রকাশ করেন। যা কোম্পানির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

কোনো প্রতিষ্ঠান কোম্পানির কোনো সম্পত্তি নিলামে তুলছে না। এমন সংবাদ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদক একটি কুচক্রীমহলের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা না বলেই সংবাদটি প্রকাশ করেন। সংবাদটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এমারাল্ড কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে বেসিক ব্যাংক ও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ৫ বছর আগে দেশ ত্যাগ করেছে কোম্পানিটির সাবেক পরিচালনা পর্যদ। দীর্ঘ ৫বছর যাবত কোম্পানিটির উৎপাদন ও অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর কোম্পানির সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের কথা বিবেচনায় নিয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি মিনোরি বাংলাদেশকে ২০২১ সালে এর দায়িত্ব তুলে দেয়। পাশাপাশি সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. শফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় কোম্পানিটিতে। এর ধারাবাহিকতায় মিনোরি বাংলাদেশ দায়িত্ব পাওয়ার পর এমারাল্ড অয়েলকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনে।”

“বিগত ৬ বছরের এজিএম সম্পন্ন করে। সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের মাঝে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ২ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন করে। এছাড়া অন্তবর্তী ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছে। এমারাল্ডের দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন বোর্ড বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে। এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণের সুদ মওকুফ চেয়ে আসল টাকা পরিশোধের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করে। এতে একটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্মতি জ্ঞাপন করে। বেসিক ব্যাংকে ঋণের সুদ মওকুফ চেয়ে চিঠি দেয় এমারাল্ড অয়েল। সে কপিও কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে। অথচ যাচাই বাছাই ছাড়াই মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

এদিকে সংবাদের একটি অংশে বলা হয়েছে, এমারাল্ড অয়েলের ফ্যাক্টরিতে ৭০ জন কর্মচারী ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, এমারাল্ডের ফ্যাক্টরিতে স্থায়ী ১০৫ জন স্থায়ী ও ৩০০ জন অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে। এছাড়া ১৬-১৮ ঘণ্টা চলমান থাকে। সংবাদের একটি অংশে বলা হয়েছে, গাজীপুর থেকে ধানের কুঁড়া সংগ্রহ করা হয় । প্রকৃতপক্ষে গাজীপুর থেকে কোনো ধানের কুড়া সংগ্রহ করা হয় না। কোম্পানির এনলিস্টেড এমন কোনো পার্টি নেই। সংবাদের আরেকটি অংশে বলা হয়েছে, ভারতে স্পন্দন তেল দেওয়া হয়। আসলে ভারতে কোনো পার্টির কাছে কোম্পানি তেল বিক্রি করে না। পাশাপাশি ব্যাংক এশিয়ার কাছে কোম্পানির জমি বন্ধক থাকার বিষয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয় এবং ব্যাংক ঋণ শোধের ব্যাপারে মিনোরি বাংলাদেশ উদ্যোগ গ্রহণ করে। এছাড়া বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে কয়েকটি চিঠি চালাচালি হয় এমারাল্ড কর্তৃপক্ষের। এছাড়া বেসিক ব্যাংকের ঋণের বিষয়ে ব্যাংকটির সঙ্গে এমারাল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য আলোচনায় বসে। এ উদ্যোগে সহযোগিতা করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু শেয়ারনিউজ ২৪ এসব তথ্য না জেনেই মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করে।

এদিকে ঋণ পরিশোধে বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। বেসিক ব্যাংকের ঋণ নিয়ে কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অন্যান্য পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা বিজ্ঞ আদালতে চলমান রয়েছে। সাবেক পরিচালনা পর্যদ ঋণের টাকা পরিশোধ না করে দেশ ত্যাগ করেছেন। এমন অবস্থায় জাপানি বিনিয়োগকারী মিনোরী বাংলাদেশ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা করছে। এছাড়াও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণের টাকা পরিশোধ করেছে মিনোরি বাংলাদেশ। এমারাল্ড অয়েলের রাইস ব্র্যান তেল জাপানে রপ্তানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে মিনোরি বাংলাদেশ। কোম্পানির এমন উন্নতি সাধনে হিংসাবশীভূত হয়ে একটি মহল সাংবাদিকদের ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে এমন হীন সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে। এই ভিত্তিহীন সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এমারাল্ড কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করলে শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

 

বেসিক ব্যাংকের প্রতিবাদ ও বক্তব্য

শেয়ারবাজার বিষয়ক অনলাইন নিউজপোর্টাল শেয়ারনিউজ২৪.কম এ প্রকাশিত ‘নিলামে উঠছে এমারেল্ড অয়েল, কোন পথে যাবে বিনিয়োগকারীরা!’ শীর্ষক সংবাদটি বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সংবাদটিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মহোদয়ের বক্তব্য উদ্বৃত করে যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলোতে শব্দগত ও ভাষাগত ভুল ছিল। যার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা এসব তথ্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সংশোধনী প্রকাশের অনুরোধ করছি।

“মেসার্স এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রাঃ) লিমিটেড বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা শাখা হতে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে শেরপুর জেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। পরবর্তীতে, পুঁজিবাজারে শেয়ার ছেড়ে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীতে রুপান্তরিত হয়। বেসিক ব্যাংকের কাছে যার বর্তমান দায় প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। উক্ত দায় সময়মতো পরিশোধ না করায় বেসিক ব্যাংক লিমিটেড এর দিলকুশা শাখা ২০১৭ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) উক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। উক্ত পরিচালনা পর্ষদ ঋণটির সুদ মওকুফ ও পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহন করে এবং এবিষয়ে আইনগত কিছু সমস্যা উদ্ভব হওয়ায়, সেগুলো সুরাহার জন্য ব্যাংকের আইন উপদেষ্টার পরামর্শ নেয়া হয়। উক্ত পরামর্শের আলোকে এমারেল্ড অয়েল এর নতুন পরিচালনা পর্ষদকে ঋণ পরিশোধে অগ্রসর হওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়।

কিন্তু, পূর্বতন উদ্যোক্তাগণ দেশের বাইরে পলাতক থাকায় এবং বর্তমান পর্ষদের নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী এবং তাদের করা সুদ মওকুফ ও পুনঃতফসিলের আবেদন নিষ্পত্তি করতে হলে ব্যাংকের নিয়মাচার অনুযায়ী দলিলাদি সম্পাদন এবং সোলেনামার মাধ্যমে মামলা স্থগিতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আইনী জটিলতা নিরসনের জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আইনগত বাধাগুলি অপসারণে সহযোগিতা করার জন্য একাধিক চিঠি এবং আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় উক্ত সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে বর্তমান কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সহায়তা না করায় এবং আইনী জটিলতা থাকায় ঋণটি পুনঃতফসিল করা সম্ভব হয়নি।

এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের এর প্রেক্ষিতে মামলার বিভিন্ন ধাপে ব্যাংকের পক্ষে রায় আসে। সর্বশেষ, অর্থঋণ আদালত আইনের ৩৩(১) ধারায় ১৩/০৭/২০২৩ তারিখে আদালত কর্তৃক ঢোলসহরত (ঢোল বাজিয়ে কোম্পানিটির ফ্যাক্টরীতে জানিয়ে দেওয়া হয় নিলামের বিষয়ে) করা হয় এবং আদালতের নির্দেশে কোম্পানীর স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি নিলামের জন্য এর দরপত্রের খসড়া দাখিল করা হয়।”

প্রতিবেদকের বক্তব্য

এমারেল্ড অয়েল থেকে যে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ সংবাদটি প্রকাশের জন্য শেয়ারনিউজের প্রতিবেদক শেরপুর কোম্পানিটির কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেছে। কোম্পানিটির শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছে। এছাড়া, কোম্পানির এমডির সাথে কথা বলেছে এবং পিআর সেকশনের সঙ্গে কথা বলারও অনেক চেষ্টা করেছে।

অন্যদিকে, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংকের এমডি মো. আনিসুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর বক্তব্য নেওয়া হয়েছে এবং ব্যাংকটির ঋণদান শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের প্রতিবাদ্য বিষয় ছিল- বেসিক ব্যাংক এমারাল্ড ওয়েলের স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যা ব্যাংকের বক্তব্যে পরিস্কারভাবে উঠে এসেছে। ব্যাংক বলেছে, আদালতের আদেশ অনুযায়ী এমারাল্ড ওয়েলের কারখানায় নিলামের বিষয়টি ইতোমধ্যে ঢোল বাজিয়ে জানিয়ে দিয়েছে এবং বর্তমানে নিলামের দরপত্র চুড়ান্ত করছে।

এমারাল্ড ওয়েল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কোম্পানিটি পুনরায় উৎপাদনে ফিরেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রতিবেদনে কেবল নিলামের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমস্যাটি নিরসনে অধিকতর তৎপর হন। এছাড়া প্রতিবেদনের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা মনে করি, নিলাম বন্ধ করার সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এমারাল্ড অয়েল ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন, তাহলে সমস্যাটির সমাধান অবশ্যই সম্ভব। এতে করে কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিনিয়োগকারীদের মুখের হাসি ফের বিলীন হয়ে যাবে না।