প্রকাশিত : শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪

Share This News

বন্যায় বিপন্ন মানুষের পাশে অনন্য ভূমিকায় সশস্ত্র বাহিনী

বন্যায় বিপন্ন মানুষের পাশে অনন্য ভূমিকায় সশস্ত্র বাহিনী

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। এসব অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানো, খাবারের ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সহায়তার কাজটি নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা। গত বুধবার সকাল থেকে বন্যার্তদের উদ্ধারের দিনরাত এক করে কাজ করছেন তারা। একই সঙ্গে বন্যার্তদের সহায়তায় সেনা ও নৌবাহিনীর সব পদবির সদস্যরা তাদের এক দিনের বেতন প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বন্যার্তদের উদ্ধার, মেডিকেল সাপোর্ট ও রিলিফ—এই তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। এরই মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এক হাজারের বেশি মানুষকে মেডিকেল সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। একই সঙ্গে যেসব স্থানে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে রান্না করেও খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।

বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী চালু করেছে জরুরি নম্বর, যেখানে সাহায্য প্রার্থীরা উদ্ধারের জন্য সহযোগিতা চাইতে পারছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে তাদের স্পিডবোট। দুই শতাধিক স্পিডবোট নিয়ে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাছে অংশ নিয়েছেন। বন্যার পানিতে আশ্রয়হীন মানুষদের তারা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন। শিশু ও বৃদ্ধদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কোলে করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে।

আইএসপিআরের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বলেন, আজকে (শুক্রবার) একজন অন্তঃসত্ত্বাকে উদ্ধার করা হয়েছে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের সিএমএইচে এই নারী সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন। দুজনই সুস্থ আছেন। তিনি আরও বলেন, পাঁচটি জেলায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সেনা সদস্যরা এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। সেনাবাহিনীর ১৭০ বোট ও মেডিকেল টিম কাজ করছে। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামের মিরসরাই, দয়াগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়িতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, বুড়িচং ও ফেনীতে কাজ করছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।

আইএসপিআর পরিচালক আরও জানান, এই সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী ১৭ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে। ১ হাজার ৮০ জনকে মেডিকেল সাপোর্ট দিয়েছে, রিলিফ দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার ২৫০ জনকে। বন্যার্তদের রান্না করে খাবার পরিবেশন করছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।

সামি উদ দৌলা চৌধুরী জানান, আর্মি এভিয়েশনের হেলিকপ্টারগুলো উদ্ধার কার্যক্রম ও রেশন ড্রপের কাজ করছে। নৌবাহিনী ১৭টি বোট নিয়ে ৬ শতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে। তিনি বলেন, দুর্গত এলাকায় রানওয়ে না থাকায় হেলিকপ্টার দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে বিমানবাহিনী। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে এই সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। ছোট-বড় ৫ শতাধিক রেশন প্যারাসুট দিয়ে ড্রপ করা হয়েছে।

আর্থিক সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণ: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য হিসাব নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। ‘লজিস্টিকস এরিয়া রিলিফ ফান্ড’ হিসাব নম্বর ০০১৮-০২১০০১০১১০, দ্য ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, রেডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল শাখার অনুকূলে অনুদান দেওয়া যাবে। একই সঙ্গে বিকাশের ক্ষেত্রে ০১৭৬৯০১৩৮৫৮ নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুটি নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। যেগুলো হলো ০১৭৬৯-০১৩৬০৪, ০১৭৬৯-০১৩৫৩০। এই নম্বরগুলোতেও যোগাযোগ করা যাবে।

ঢাকায় ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র; প্রযত্নে: লজিস্টিকস এরিয়া, ঢাকা সেনানিবাসে যোগাযোগ করতে বলেছে আইএসপিআর। স্থান: সেন্ট্রাল অর্ডন্যান্স ডেপো (সি ও ডি), মিলিটারি উইং (হোটেল রেডিসন ব্লু সংলগ্ন)। যোগাযোগের নম্বর ০১৭৬৯-০৫১৮১৯, ০১৭৬৯-০১৩৮৩২, ০১৭৬৯-০১৩৫৩০ ও ০১৭৬৯-০১৩৬০৪।

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দিতে আগ্রহী হলে নিম্নলিখিত নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ফেনী ০১৭৬৯-৩৩২০৩২ ও ০১৭৬৯-৩৩২১৭৮, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ০১৭৬৯-২৪৪০১২, সীতাকুণ্ড-মিরসরাই ০১৭২৮-২০২৬৭৭, ০১৭৬৯-২৪২১৩২ ও ০১৭৬৯-২৪২১২৮, খাগড়াছড়ি ০১৭৬৯-৩০২৩৪২ ও ০১৭৬৯-৩০২৩৩৬, ফটিকছড়ি ০১৭৬৯-২৭২৩৪২ ও ০১৭৬৯-২৭২৩৩৬; মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ ০১৭৬৯১৭০০০৬।

আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, খাদ্য সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বিস্কুট, চিড়া, গুড়, খেজুর, বান ও পাউরুটি, নুডুলস, খাবার স্যালাইন, গুঁড়া দুধ, চিনি ও খাবার পানি এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসেবে দিয়াশলাই ও মোমবাতিকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।