প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

Share This News

দূর্গাপুজোর উৎপত্তিস্থল মেধস মুনির আশ্রম

দূর্গাপুজোর উৎপত্তিস্থল মেধস মুনির আশ্রম

সংগ্রাম দত্ত: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা পাহাড়চূড়ায় রয়েছে শ্রী শ্রী চন্ডীতীর্থ ও মেধস আশ্রম। দেবীর আবির্ভাব স্থান মেধস আশ্রম পৌরাণিক শত সহস্র বছরের পবিত্র তীর্থভূমি। পবিত্র এই তীর্থভূমিতে হাজার হাজার বছর আগে দেবী ভগবতীর আর্বিভাব ঘটেছিল বলে জনশ্রম্নতি রয়েছে। এই মেধস  আশ্রমে মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে সর্বপ্রথম মর্ত্যলোকে দশভূজা দুর্গাদেবীর পূজা শুরু হয় বলে বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।

কোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল এই আশ্রমের দেবত্তোরকৃত প্রায় ৫৫ একর ভূমি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত পবিত্র এই তীর্থভূমি চট্টগ্রাম জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কড়লডেঙ্গার ৫০০ ফুট উচ্চ শিকড়ে সন্ন্যাসী পাহাড়চূড়ায় এই আশ্রম অবস্থিত। কালের আবর্তে সেই পীঠস্থান অবলুপ্ত হয়ে পড়েছিল। পুরাকালে এই আশ্রমের কথা শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ থাকলে সাধারণ্যে তার প্রকাশ বা প্রচার ছিল না। যা' কলি কালের শত শত বছর পূর্বে প্রচার লাভ করে।

গৌরীতন্ত্রের কামাখ্যা পটলে এই আশ্রমের বিবরণ মতে, কর্ণফুলী মহানদী গোপর্বত সমুদ্ভবা। তস্যাশ্চ দক্ষিণে তীরে পর্বতঃ পূণ্যাবিত্তমঃ ॥ তত্র দশমহাবিদ্যা গঙ্গানাভি স্বরূপিণী। মার্কণ্ডেয় মুনেঃ স্থানং মেধসোমুনেরাশ্রমঃ ॥ তত্রচ দক্ষিণাকালী বানলিঙ্গং শিবঃ স্বয়ং ॥ ইতি গৌরী তন্ত্রীয় কামাখ্যা পটলে দেবী মাহাত্ম্য বর্ণন প্রসঙ্গেন সমুদ্ভাসিতম্। অন্যদিকে কামাখ্যাতন্ত্রে বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয় যে,

কর্ণফুলীং সমারাভ্য যাবদ্দক্ষিণ সাগরম্।

পুণ্যক্ষেত্রমিদং প্রোক্তং মুনিগণবিসেবিতম্ ॥

যত্রাস্তি বেতসা নাম্নী দিব্যা পুন্যাতোয়া নদী।

তত্রৈবাসীম্মুনি শ্রেষ্ঠ মেধসঃ ঋষিরাশ্রমঃ ॥

ইতি কামাখ্যাতন্ত্রে পঞ্চত্রিংসাৎ পটলে সিদ্ধস্থান

বর্ণন প্রসঙ্গেন সমুদ্ভাসিতম্।।

এতদ্ব্যতীত যোগিনীতন্ত্রে এই মার্কণ্ডেয় আশ্রমের কথা এবং তৎসন্নিহিত চতুর্ধনু পরিমিত মার্কণ্ডেয় কুন্ড ও মার্কণ্ডেয় পদচিহ্ন ইত্যাদি উল্লিখিত আছে।

শ্রীমদ বেদানন্দ স্বামী যোগ সাহায্যে এই মেধসাশ্রমের সন্ধান পান। সেই আশ্রম উক্ত শাস্ত্রোক্ত চিহ্ন আজো অক্ষুন্নভাবে বিদ্যমান আছে। স্বামীজি বহু আয়াসে, বহু হিংস্রজন্ত সমাকীর্ণ নিবিড় অরণ্যসমাকুল পর্বত প্রদেশে প্রবেশ করিয়া এই তীর্থ আবিষ্কার করেন।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এই আশ্রম চট্টগ্রাম জেলা শহরের অতি নিকটে অবস্থিত। অদ্র পল্লী সারোয়াতলী হইতে আশ্রম পর্বতের সানুদেশ প্রায় এক ক্রোশ ব্যবধান। আশ্রমের শোভা অতি রমণীয়। সঘন শ্যামল তরুলতা শোভিত পর্বতস্তরে মেধসাশ্রম। পর্বতস্তরের নিম্নভাগে চম্পকারণ্য। চম্পকারণ্যের উভয় পার্শ্বস্থ পর্বত বাহুর উপর দিয়ে আশ্রমে আরোহণের পথ। বামবাহুর বামভাগে নাভিগঙ্গা। ঐ গঙ্গা নাভি-সদৃশী গভীর কুণ্ডাকারে বিরাজমান। সেই কুণ্ড মধ্যে পর্বত নির্ঝরিণীর নির্ঝর-নিকর সুমধুর ধ্বনিতে অবিরাম ধারায় প্রবাহিত। জল অতি মধুর। পর্বত বাসী দেবতাবোধে ঐ কুণ্ড পূজা করে। তদূর্ধ্বে বিষ্ণুপদ লাঞ্ছিত, শঙ্খ-চক্রচিহ্নিত অনেক কুণ্ড বর্তমান।

নাভিগঙ্গার নিম্নদেশে ত্রিশুল চিহ্নিত ব্যাসকুণ্ড। উপরিস্থ অধিত্যকা ভূমিতে মেধসাশ্রম। উহার দক্ষিণাংশে নানাবিধ সুরভি কুসুম ভূষিত সুরথকুণ্ড ও বৈশ্যকুণ্ড বিরাজমান । আশ্রম সম্মুখে একটি প্রাচীন বিল্বতরু ও চারিদিকে আমলকী কানন। ঐ আশ্রমে সন্নিহিত পূর্বাংশে চতুর্ধনু পরিমতি মার্কণ্ডেয় কুণ্ড। পূর্বোক্ত পর্বত নির্ঝরিণী দ্বিধা হয়ে এক ধারায় নাভি- গঙ্গায় ও অপর ধারায় এই মার্কণ্ডেয় কুণ্ডে প্রবাহিত। মার্কণ্ডেয় কুণ্ডে কচ্ছপাকৃতি পাষাণখন্ড বিরাজিত। কুণ্ডের উপরিভাগে মার্কণ্ডেয় ঋষির পদচিহ্ন বর্তমান রয়েছে। তদূদ্ধে মার্কণ্ডেয় আশ্রম ও দশমহাবিদ্যার স্থান স্তরে স্তরে বিরাজমান। উভয় আশ্রমের দৃশ্য অতি মনোহর। আশ্রম- পথে প্রবেশ করলে চিত্তপ্রসাদ উদ্ভব হয়। আশ্রম শোভা বর্ণনাতীত।