প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

Share This News

রাষ্ট্রপতির কথার ঠিক নেই: হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষোভ!

রাষ্ট্রপতির কথার ঠিক নেই: হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষোভ!

রেজুয়ান আহম্মেদ


রাষ্ট্রপতি, একজন জাতির অভিভাবক, যার কথায় মেলে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের প্রতিফলন। তার মুখ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি সিদ্ধান্ত দেশবাসীর জন্য এক ধরনের নির্দেশনা, আশার প্রতীক। কিন্তু সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে এক ধরণের অস্পষ্টতা ও দুর্বলতা ফুটে উঠেছে, যা জনমনে কেবল প্রশ্ন নয়, এক ধরনের অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে তার মন্তব্যে সৃষ্ট বিতর্ক অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও প্রজ্ঞা

রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের মাথা, একজন যে তার বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার আলোকে জাতির যেকোনো ক্রান্তিকালে সঠিক দিকনির্দেশনা দেবেন। তার দায়িত্ব শুধু আইনি কাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মানদণ্ডেও দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে বসা ব্যক্তি হিসেবে তার প্রতি দেশবাসীর আস্থা অপরিসীম। রাষ্ট্রপতির প্রতিটি কথা, বিশেষ করে একটি স্পর্শকাতর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, হয়ে ওঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু যখন সেই ব্যক্তি নিজের ভাষায়, নিজের বক্তব্যে বারবার দ্বিধাগ্রস্ত হন, তখন সেই অবস্থানের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রপতির সাম্প্রতিক মন্তব্যে জনমনে এমনটাই ঘটেছে। তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তা রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝেও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, রাষ্ট্রপতির মত এমন দায়িত্বপূর্ণ একটি পদের কথা কেন এভাবে ঠিক নেই?

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিক্রিয়া

অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের দায়িত্ব দেশের সুশাসন নিশ্চিত করা, তারা রাষ্ট্রপতির এমন বক্তব্যে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাদের মতে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা অত্যন্ত পরিমিত ও বিবেচনাপূর্ণ মন্তব্যের দাবি রাখে। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে অস্পষ্টতা এবং দ্ব্যর্থতা থাকলে তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তার কথা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে যেখানে দেশের সংকটময় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন ছিল শান্ত, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব।

হাসিনার পদত্যাগ: একটি রাজনৈতিক বিভাজন

শেখ হাসিনা, দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি একাধারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং দেশের উন্নয়নের অগ্রগতি নিশ্চিত করার দাবিদার, তার পদত্যাগের দাবিটি দেশের রাজনীতিতে বরাবরই আলোচিত। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে এ বিষয়ের উপর কোন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকা, বা দ্ব্যর্থপূর্ণ মন্তব্য করা, দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি এক ধরনের সংকট তৈরি করছে, যারা দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও শান্তির লক্ষ্যে কাজ করছে।

কথার মধ্যে জটিলতা: একটি জাতীয় সংকট

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব কেবল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তার দায়িত্ব হলো জাতিকে সংকটমুক্ত রাখা। তার একেকটি কথা জনমনে স্বস্তি ও আশার সঞ্চার করতে পারে। কিন্তু যখন তার কথা স্পষ্ট নয়, যখন তার বক্তব্য রাজনৈতিক সমীকরণকে আরও জটিল করে তোলে, তখন তা জাতীয় অগ্রগতির জন্য এক ধরণের বিপর্যয় হয়ে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে তার বক্তব্যে স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকা কেবল রাজনৈতিক মহলে নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও হতাশা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা ও কথার প্রভাব

রাষ্ট্রপতির আসন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। তার কথা ও কাজের উপর ভিত্তি করে দেশের আইনকানুন ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপতির বক্তব্য যদি অস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থপূর্ণ হয়, তবে তা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। রাষ্ট্রপতির প্রতি দেশবাসীর যে আস্থা ও সম্মান, তা তার কথার মাধ্যমে অর্জিত হয়। এই আস্থার ভিত যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বিপন্ন হতে পারে।

শেষ কথা

আমাদের রাষ্ট্রপতি, যিনি দেশের সবার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তার উচিত নিজের কথায় স্থিরতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়া। শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে তার মন্তব্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করতে হলে তাকে দায়িত্বশীল ও স্পষ্ট বক্তব্য রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এ ধরনের বিভ্রান্তি খুবই ক্ষতিকর। একটি দেশ তখনই শান্তি ও উন্নতির পথে এগিয়ে যায়, যখন তার নেতৃত্ব দৃঢ় ও প্রজ্ঞাময় হয়। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হলো দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা, বিভ্রান্তি নয়।

রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম