প্রকাশিত : শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

Share This News

লুট হওয়া ৪৮ অস্ত্র ও ৭ হাজার গুলি এখনও দুর্বৃত্তের হাতে

লুট হওয়া ৪৮ অস্ত্র ও ৭ হাজার গুলি এখনও দুর্বৃত্তের হাতে

দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি টার্গেট করা হয়েছিল পুলিশের স্থাপনা। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের চেকপোস্ট, ফাঁড়ি ও থানা আক্রান্ত হয়েছে। হামলা হয়েছে নরসিংদী কারাগারে। পুলিশ সদরদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এখান থেকে ৮ হাজার রাউন্ডের বেশি গুলি ও ৮৫টি অস্ত্র লুট করে হামলাকারীরা। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কার্যালয়ে হামলা করে ছিনিয়ে নেয় ৩টি অস্ত্র। আরেক জেলা থেকে পুলিশের একটি অস্ত্র খোয়া গেছে। সব মিলিয়ে লুট হয়েছে ৮৯টি অস্ত্র। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪১টি অস্ত্র এবং এক হাজার রাউন্ডের বেশি গুলি। এই হিসাবে লুট হওয়া ৪৮টি অস্ত্র ও প্রায় ৭ হাজার রাউন্ড গুলি এখনও দুর্বৃত্তদের হাতে। দ্রুত এসব অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা না গেলে তা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।

এদিকে নরসিংদীর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে ৩৬০ জনের এখনও হদিস নেই। তাদের মধ্যে ছয়জন দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও অপরাধী আছে। গতকাল পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছেন ৪৬৬ বন্দি। 

অতিরিক্ত আইজিপি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে জোর অভিযান চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাশকতায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভেবে প্রথমে পুলিশ নমনীয় ছিল। কিন্তু এর পর নাশকতা শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকে। তিনি বলেন, ‘হামলাকারীরা গান পাউডার ও বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে। এ কারণে তাদের দেওয়া আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীসহ দেশের যেসব এলাকায় বেশি সহিংসতা হয়েছে, সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে কেউ অপেশাদার আচরণ করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে পুলিশের অনেক কর্মকর্তার ভাষ্য, বিভিন্ন এলাকায় শত শত মানুষের মধ্যে তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। আত্মরক্ষা ছাড়া অনেকের কিছু করার ছিল না। তবে মাঠ পর্যায়ের অনেক পুলিশ সদস্যের মূল্যায়ন হলো– পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনেক জায়গায় তাদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতে হয়েছে। শুরুতে কার্যকর সিদ্ধান্ত পেলে নাশকতার ঘটনা কম হতো।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কয়েকটি অপরাধ বিভাগের ডিসি, ওসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নৈরাজ্য মোকাবিলায় সঠিক ভূমিকা রেখেছেন কিনা তাও বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। কোন পরিস্থিতিতে তারা অন্য ইউনিটের সহযোগিতা চেয়ে নিজেদের উদ্ধার করার কথা বলেছেন, তা তদন্ত করে দেখা হবে। 

চলতি মাসের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ১৮-২২ জুলাই ছিল উত্তপ্ত পরিস্থিতি। এ সময় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ২ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৯টি কল আসে। পরিস্থিতি এতটা ভীতিকর ছিল যে জীবন বাঁচাতে ৯৯৯-এ কল দেন পুলিশ সদস্যরাও। এ সময় পুলিশ-সংক্রান্ত কল ছিল ৪ হাজার ৯২টি। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কল ১ হাজার ৮১৪টি। আর আগুনের ঘটনায় কল আসে ৬৫৮টি। এর মধ্যে ৮০ ভাগ কল ফোন রাজধানীর ভেতর থেকে করা হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকার পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক ছিল। এই দু’দিন ঢাকার অনেক এলাকা আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল। যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, রামপুরাসহ অনেক এলাকায় শিশুদের ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কোনো কোনো জায়গায় আন্দোলনকারীদের মাঝে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর পর আশপাশের সরকারি স্থাপনা আক্রান্ত হলে পুলিশ-র‍্যাব তা প্রতিহত করতে পারেনি। এক পর্যায়ে র‍্যাব হেলিকপ্টার থেকে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

উত্তরা, রামপুরায় দায়িত্ব পালনকারী দুই কর্মকর্তা জানান, শুরুর দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। যখন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়, তখন পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে নির্দেশনা আসে। কিন্তু মাঠে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। আবার অনেক ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কী করতে হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল না। একের পর এক হামলার তথ্য পেয়ে কেউ কেউ বিচলিত হয়ে পড়েন।

অনেকে বলছেন, জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কী ধরনের প্রস্তুতি থাকবে, এ ব্যাপারে আগাম ছকের ঘাটতি ছিল। এর আগে এত অল্প সময় রাজধানীতে এত ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহতের ঘটনা আর ঘটেনি। শুরু থেকে নাশকতার মূল স্পট ঘিরে সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হতো।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘নরসিংদী কারাগার থেকে লুট হওয়া ১ হাজার ৯১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। তবে এখনও প্রায় ৭ হাজার রাউন্ড গুলি ও ৪৮টি অস্ত্র দুর্বৃত্তদের কাছে রয়েছে।’