প্রকাশিত : সোমবার, ১২ আগস্ট ২০২৪

Share This News

কে সঠিক শেখ হাসিনা নাকি জয়

কে সঠিক শেখ হাসিনা নাকি জয়

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারানোর পর প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় তিনি পদত্যাগ করার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। অন্যদিকে দু’দিন আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেন, তার মা পদত্যাগ করেননি। সংবিধান অনুসারে, তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও ভয়াবহ বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা। অনেকে সুযোগ বুঝে দেশ ছাড়তে পারলেও আটকে পড়া অনেক এমপি-মন্ত্রী ও অসংখ্য নেতাকর্মী প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের অনেকে আবার বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয়ও চেয়েছেন।

দেশত্যাগের প্রায় সাত দিন পর নীরবতা ভাঙেন শেখ হাসিনা। সরকার পতনের পেছনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিযোগ করেছেন।  তিনি আরও বলেন, আমি পরাজয় মেনে নিলাম ও পদত্যাগ করলাম।  রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দি ইকোনোমিক টাইমস ও দ্য প্রিন্ট।

এদিকে মায়ের দেশত্যাগের পর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কথা বলে যাচ্ছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। 

রোববারের দি ইকোনোমিক টাইমস ও দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। জয় রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘আমার মায়ের পদত্যাগের বিষয়ে একটি বিবৃতি এক সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে, যা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি একটু আগে তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে বা ঢাকা ছাড়ার পরে এ পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেননি।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন তিনি।

সম্প্রতি সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, নির্বাচনের ঘোষণা এলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হবে। এমনকি রাজনীতি শুরুর ব্যাপারে প্রস্তুত বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এদিকে রোববার শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি পদত্যাগ করেছি, যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়। ছাত্রদের লাশ নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তা করতে দিইনি, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম, যদি আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সার্বভৌমত্ব আত্মসমর্পণ করতাম এবং আমেরিকাকে বঙ্গোপসাগরের ওপর কর্তৃত্ব করতে দিতাম। আমি আমার দেশের জনগণের কাছে অনুরোধ করছি, ‘দয়া করে মৌলবাদীদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি দেশে থাকতাম, তাহলে আরও প্রাণহানি হতো, আরও সম্পদ ধ্বংস হয়ে যেত। আমি প্রস্থান করার জন্য অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আপনার নেতা হয়েছি। কারণ আপনি আমাকে বেছে নিয়েছেন, আপনি আমার শক্তি ছিলেন’।

পরাজয় মেনে নিয়ে সমর্থক ও দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি দেশে ফেরায় অঙ্গীকারাবদ্ধ।

পরাজয় মেনে নিয়ে তিনি বলেন, আমি শিগগিরই ফিরে আসব ইনশাআল্লাহ। পরাজয় আমার, কিন্তু জয় বাংলাদেশের জনগণের। 

শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম, আমি তোমার জয় নিয়ে এসেছি, তোমরা আমার শক্তি, তোমরা আমাকে চাওনি, আমি নিজেই তখন চলে গেলাম, পদত্যাগ করলাম। আমার কর্মী যারা আছেন, কেউ মনোবল হারাবেন না। আওয়ামী লীগ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার কথাকে বিকৃত করার অভিযোগও করেছেন।

তিনি বলেন, আমি আমার তরুণ ছাত্রদের কাছে আবারও বলতে চাই— আমি তোমাদের কখনো রাজাকার বলিনি… আমার কথাগুলো বিকৃত করা হয়েছে। একটি মহল আমার বিপদের সুযোগ নিয়েছে। 

‘রাজাকার’ শব্দটি বাংলাদেশে অবমাননাকর বলে বিবেচিত হয়। কারণ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল।