প্রকাশিত : শনিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৪

Share This News

বিভাগীয় অফিসার দিয়ে পূরণ এসআই পদের ৭৫ ভাগ

বিভাগীয় অফিসার দিয়ে পূরণ এসআই পদের ৭৫ ভাগ

পুলিশে শুরু হয়েছে সংস্কারের প্রক্রিয়া সাধারণ পুলিশ সদস্যদের দাবির মুখে। এরই ধারাবাহিকতায় বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর একটি হলো পুলিশে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে নিয়োগ। এসআই নিয়োগের ৭৫ ভাগ পূরণ করা হবে বিভাগীয় অফিসারদের দিয়ে। বাকি ২৫ ভাগ নিয়োগ হবে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে।

গত বৃহস্পতিবার পুলিশ বাহিনী সংস্কার আন্দোলন-২০২৪ এর ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা তৈরির জন্য বলা হয়েছে। দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত ডিআইজি মো. নাজমুল ইসলাম এ সংক্রান্ত তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছেন। তাদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে নির্দেশনা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

এসআই পদে নিয়োগের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা তৈরির জন্য বলেছে দাবি বাস্তবায়ন কমিটি। এতে বলা হয়েছে, গত ১১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে পুলিশের দাবি বাস্তবায়ন কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়—বাংলাদেশ পুলিশের অধস্তন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে পিআরবি অনুসারে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করা হবে। ব্যক্তিগত কোনো কাজে সদস্যকে ব্যবহার করা যাবে না। কনস্টেবল থেকে সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পোস্টিং বাণিজ্য বন্ধ করা হবে।

সার্জেন্ট মার্জ করে এসআই পদে, এটিএসআইকে মার্জ করে এএসআই পদে রূপান্তর করা হবে। এসআই পদের ৭৫ ভাগ পদ বিভাগীয় অফিসার দিয়ে পূরণ করা হবে এবং ২৫ ভাগ নিয়োগ দেওয়া হবে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে। জনগণের স্বার্থে এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগের অবৈধ রেকার বাণিজ্য বন্ধ করা হবে এবং মামলার টার্গেট দেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সংস্কারের যে দাবিগুলো উঠেছে, সেগুলোর বিষয়ে সবাই একমত। এসবের মধ্যে কিছু দাবি পূরণের জন্য সময় প্রয়োজন, আর কিছু দাবি দ্রুত সময়ে পূরণ করা সম্ভব। যেসব দাবি দ্রুত পূরণ করা সম্ভব সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। যেগুলো সময়সাপেক্ষ সেগুলোর জন্যও কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটির প্রধানরা সেসব বিষয়ে মতামত দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের ডেইলি অ্যালাউন্সের টাকা বিগত সরকার দেয়নি। পরিশ্রম করলেও সেটা তারা পায়নি। এটার মূল কারণ ছিল পুলিশকে অর্থছাড় না দেওয়া। যে কারণে এটা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন সেই টাকাটা দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। টাকা পেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে তা দিয়ে দেওয়া হবে।

এসআই পদের ৭৫ ভাগ বিভাগীয় অফিসার দিয়ে পূরণের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এই দাবি বাস্তবায়নের পথে আমরা চলছি। যারা আইন সম্পর্কে ভালো জানেন তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আইন বিষয়ের মতামত দেবেন। মতামত পাওয়ার পর কিছু বিষয় এখনই করা সম্ভব হবে। বাকিগুলো ক্রমান্বয়ে করা হবে। আইনি কাঠামোর মধ্য থেকে পুরো বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সার্জেন্টদের এসআই পদে এবং এটিএসআইদের এএসআই পদে মার্জ করার বিষয়ে দাবি বাস্তবায়ন কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, সার্জেন্ট পদে ট্রেনিং নিয়ে চাকরিতে যোগদানের পর তারা সারা জীবন আর অন্যত্র যাওয়ার সুযোগ পান না। তাদের ট্রাফিক সংশ্লিষ্ট পদগুলোতেই কাজ করতে হয়। তারা থানা বা ক্রাইম রিলেটেড কাজ করতে পারেন না। আবার ক্রাইমে যারা আছে, তাদের ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও সড়কে মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী মামলা দিতে পারেন না। এদিকে সার্জেন্টদের পদোন্নতিও ধীরে হয়। মার্জ করা হলে পদোন্নতির বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব হবে। সার্জেন্টদের মার্জ করা হলে অপরাধ বিভাগ ও ট্রাফিক উভয় জায়গাতেই এই পুলিশ সদস্যরা কাজ করতে পারবেন।

তবে এ কাজটি করতে যথেষ্ট সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পুলিশের দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, এটা করার জন্য আইন পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া আরও অনেক কিছুরই পরিবর্তনের দরকার হবে। সেই লক্ষ্যে কমিটি কাজ করছে।

পুলিশের ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত ডিআইজি মো. নাজমুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘দাবিগুলোর ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই। এখন সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা পৃথক কমিটি করেছি। যেসব কাজ আইজিপি স্যারের হাতে আছে, সেগুলো এখনই করা হচ্ছে। আর যেগুলো সময় প্রয়োজন, সেগুলোর বিষয়েও কাজ চলছে। ১১ দফা দাবিসহ পুলিশ সংস্কারের কাজ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ক্রমান্বয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বেশিরভাগ থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রাণ যায় পুলিশ সদস্যদের। নিজেদের জীবনের নিরাপত্তায় থানা ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয়ে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এরই মধ্যে জীবনের নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে যান নন ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। দাবি ওঠে পুলিশ সংস্কারের।

দাবি আদায়ে রাজারবাগসহ দেশের পুলিশ লাইন্সগুলোতে বিক্ষোভ করেন তারা। গত ৬ আগস্ট নতুন আইজিপি হিসেবে মো. ময়নুল ইসলাম যোগদানের পর তিনি পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান এবং দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। তাতেও কর্মবিরতি থেকে পিছু হটছিলেন না আন্দোলনে থাকা পুলিশ সদস্যরা। ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিরা সাক্ষাৎ করে পুলিশ সংস্কারের দাবি জানান তারা। দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। দাবি পূরণে একটি কমিটিও করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের জন্য সময়সীমা দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতনদের আশ্বাসে কর্মবিরতি ছেড়ে কাজে যোগ দিতে শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা। ক্রমান্বয়ে চালু হয় দেশের সবকটি থানা। সেনা ও আনসারের সহায়তায় পুরোদমে কাজ শুরু না হলেও সীমিত পরিসরে পুলিশি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।